সব পাখির ভিড় ছাপিয়ে যার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া সেটা হল অস্প্রে। ডানা মেলে নেমে এসে নদী থেকে ঝপ করে মাছ তোলার সেই অভিযানের রোমাঞ্চ দেখতেই ভিড় বাড়ছে পাখিরালয়ে। মাঝিরা বলছেন, প্রতিদিন প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছ ধরে খায় অস্প্রে। নদীর জল কেটে এই পাখির শিকার করা দেখার সুযোগই যেন হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে স্বপ্নের মুহূর্ত। আর সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে চিত্রগ্রাহকদের ক্যামেরার শাটার যেন থামছেই না।
advertisement
চিত্রগ্রাহক সুদীপ ব্যানার্জী বলেন, “এখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখি দেখা যায় শীতকালে। আমরা যারা কলকাতায় থাকি তাদের জন্য পূর্বস্থলী ছবি তোলার দারুণ জায়গা। অনেক পাখি এসেছে ছবি তুললাম, এখনও আরও পাখি আসবে।” চুপির ছাড়িগঙ্গায় নৌকা ভাড়া করলেই মাঝিরা ঘুরিয়ে দেখান প্রকৃতির এক অন্য দুনিয়া। অস্প্রে ছাড়াও দেখা মেলে গাডওয়াল, রেড-ক্রেস্টেড পচার্ড, শীতসঙ্গী আরও বহু পরিযায়ী পাখীর। নদীর জলে ভাসতে ভাসতে যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই যেন নানা রঙের পাখির মহড়া, কেউ ডানা ঝাপটাচ্ছে, কেউ বা আকাশে উড়ছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
একসময় নৌকা মাঝি এবং পাখিদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল কচুরিপানা। নদীর বুক ঢেকে নেওয়া সবুজ স্তর নৌকা চলাচল যেমন কঠিন করত, তেমনই বাধা হয়ে দাঁড়াত পাখিদের খাবার খোঁজার পথেও। কিন্তু এ বছর সেই সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। মাঝিদের উদ্যোগে ছাড়িগঙ্গা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। মাঝিরা বলছেন, “আরও কয়েকদিন পরই আবার নতুন করে পরিষ্কারও করা হবে।” স্থানীয়দের আশা আগের মতোই এবারও রেকর্ড সংখ্যায় ফিরে আসবে পরিযায়ী পাখিরা। কারণ পরিযায়ীদের কাছে চুপি যেন নিরাপদ, শান্ত এক আশ্রয়বাড়ি।
স্বর্ণাভ নন্দী নামের এক পর্যটক বলেন, “কলকাতা থেকে দু’বছর পর আবার এসেছি আমরা। শুধুমাত্র অস্প্রে পাখির ছবি তোলার জন্যই এসেছি। ছবিও হয়েছে ভাল, মাছ নিয়েও ছবি উঠেছে।” কলকাতা থেকে একটু পথ পেরিয়েই যেন এক টুকরো স্বর্গ! ঠিক এমনটাই অনুভব করেন পর্যটকরা। শহরের যান্ত্রিকতা, ট্রাফিক, শব্দ সব পিছনে রেখে প্রকৃতির কোলে কিছুটা শান্তির খোঁজে ছুটে আসেন বহু মানুষ। ডানার শব্দ, নৌকার মৃদু দোল, সামনে নদী, আকাশ, সবুজের অপূর্ব মেলবন্ধন, চুপি পাখিরালয় যেন শীতের মরশুমে এক স্বপ্নলোক। এই শীতে চুপি পাখিরালয়ে রেকর্ড ভিড় হবে পাখিদের, এমনটাই আশা করছেন স্থানীয়রা। আর যারা একবার চুপির শীতের রূপ দেখেছেন তাঁরা জানেন, কেন এই জায়গা বছরের সবচেয়ে সুন্দর শীতকালীন গন্তব্যগুলির মধ্যে অন্যতম।





