এখানকার জরির কাজ কলকাতার কুমোরটুলি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি মুম্বইয়েও পাড়ি দেয়। যায় বিদেশেও। পুজোর আগে পাঁচ ছ মাস এই কাজেই ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। দুর্গা ছাড়া অন্যান্য প্রতিমাতেও জরির গহনা লাগে। তাই জৌগ্রামের কয়েকটি পরিবারে এখন দিন রাত এক করে কাজ চলছে। দেবীর মাথার মুকুট থেকে শুরু করে সারা অঙ্গের সাজ অপূর্ব শিল্পকলার মাধ্যমে তাঁরা ফুটিয়ে তুলছেন।
advertisement
শিল্পীরা বলছেন, পুজোর মরশুমে বাড়তি রোজগার হয়। তবে চাহিদা বেড়েছে। জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। একটাই সমস্যা পুঁজির। বাড়তি অর্থ থাকলে আরও অনেক আগে থেকে কাজ করা যেত। তাঁদের আবেদন, সরকার যদি স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে এই পেশায় আরও উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে পারবেন তাঁরা।
চরম সমস্যার মধ্যেও বাপ-ঠাকুরদার পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন জৌগ্রামের জরি শিল্পীরা। রয়েছে চরম আর্থিক সমস্যা। মেলে না সরকারি সাহায্য । তা সত্ত্বেও বাপ ঠাকুরদার পুরনো পেশা জরি শিল্পকে এখনও কোনওক্রমে বাঁচিয়ে রেখেছেন পূর্ব বর্ধমানের জৌগ্রাম এর কয়েকটি পরিবার। পুজো আসলেই তাঁদের বাড়তি কিছু রোজগার হয়। আর সেই আশাতেই পুজোর প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকেই দেবীর সাজ তৈরি শুরু করেন শিল্পীরা। দিন-রাত এক করে তাঁরা কাজ করেন। মূলত তাঁরা জরির বিভিন্ন রকম দেবীর সাজ তৈরি করেন। যা জেলা ছাড়াও অন্য রাজ্যেও চলে যায়। আশপাশের এলাকা ছাড়াও কলকাতার কুমোরটুলি এবং উত্তর প্রদেশে ব্যাপক চাহিদা জৌগ্রামের এই জরি শিল্পের। দেবীর মাথার মুকুট থেকে শুরু করে সারা অঙ্গের সাজ অপূর্ব শিল্পকলার মাধ্যমে তাঁরা ফুটিয়ে তোলেন।
আরও পড়ুন– পঞ্চকোট রাজবংশে শুরু হল দুর্গাপুজো ! রাজ রাজেশ্বরীর পুজোয় মাতলেন রাজ পরিবারের সদস্যরা
এই শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৫০ বছর যুক্ত শিল্পী চণ্ডীচরণ দাস জানান, বিভিন্ন সংস্থা তাদের কাছ থেকে এই জরির শিল্পের সাজ কিনে নেয়। তাদের মাধ্যমে এই সাজ চলে যায় বিদেশেও। তবে তারা কখনও সরাসরি বিক্রি করার সুযোগ পাননি ভিন দেশে। বর্তমানে অনলাইন ব্যবস্থায় মার্কেটিং চালু হলেও সেই ধারণা এখনো তাদের কাছে পৌঁছায়নি। মেলেনা কোনও সরকারি সাহায্য ৷ আক্ষেপ করে তাঁরা জানিয়েছেন, সরকার পুজো কমিটি গুলিকে আর্থিক সাহায্য করছে অথচ এই শিল্পকে বাঁচাতে কোনরকম সাহায্য বা সরকারি ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। যার ফলে তাঁরা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। চাহিদা থাকলেও অতিরিক্ত সাজ তাঁরা তৈরি করতে পারছেন না। সরকার যদি তাঁদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে জরি শিল্পীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, অন্যদিকে এই শিল্পের কদর আরও বহুদূর বৃদ্ধি পাবে।