শুধু দুর্গা নয়, একইসঙ্গে পূজিত হন কুলদেবতা কৃষ্ণরায়। ভট্টাচার্য পরিবারে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী আজও পুজোর দিন সবার আগে কৃষ্ণরায়কে ভোগ দেওয়া হয়, তারপর দেবী দুর্গাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এই নিয়ম, যা আজও ভোলেনি গ্রামের মানুষ। পরিবারের সদস্য সজল ভট্টাচার্য বলেন, এই পুজো আমাদের ঐতিহ্য। পরিবারের মানুষ থেকে শুরু করে গ্রামবাসী সকলেই এই পুজোতে খুবই আনন্দ করেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ পুরুলিয়ায় এবার ‘বিষ্ণুপুরী’ স্বাদ! টেরাকোটার ঝকমারি, ফসকে গেলেই হবে আফসোস
খাটুন্দির সাত দুর্গার পুজোর ইতিহাসও বেশ চমকপ্রদ। পরিবারের সূত্রে জানা যায়, ভট্টাচার্য পরিবারের পূর্বপুরুষ রামগোপাল ভট্টাচার্য মূলত কেতুগ্রাম থানার অন্তর্গত কুলাই গ্রামে বসবাস করতেন। কিন্তু জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক অন্ধকার রাতে তিনি চলে আসেন খাটুন্দি গ্রামে। তারপর গ্রামেই প্রতিষ্ঠা করেন কুলদেবতা কৃষ্ণরায় এবং দেবী দুর্গাকে। সেই সময় এই জায়গা ছিল শ্মশান ভূমি। রামগোপাল ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর নিয়ম মেনে তাঁর বংশধরেরাই দুর্গাপুজো চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রথমে ছিল একটি মাত্র প্রতিমা। কিন্তু ধীরে ধীরে পারিবারিক মনোমালিন্যের জেরে ভট্টাচার্য পরিবারের ভাইয়েরা আলাদা আলাদা দুর্গা প্রতিমা আনতে শুরু করেন। ক্রমে এক প্রতিমা থেকে বেড়ে যায় সংখ্যাটা। বর্তমানে মোট সাতটি দুর্গা প্রতিমার পুজো হয় একই উঠোনে। সেই থেকেই যেন এই পুজোর নাম হয়ে যায় ‘সাত দুর্গার পুজো’।
এখনও পর্যন্ত ভট্টাচার্য বাড়িতে পুজোর প্রতিটি আচার নিখুঁতভাবে পালন করা হয়। আগে কৃষ্ণরায়, তারপর একে একে সাত দুর্গার আরাধনা। পরিবারের সদস্যরা যত দূরেই থাকুন না কেন, এই চার দিনের জন্য সকলে ফিরে আসেন খাটুন্দিতে। সজল ভট্টাচার্য আরও বলেন, পুজোতে সবাই বাড়ি ফিরে আসে, আমরা সকলে মিলে খুবই আনন্দ করে ব্যস্ততার সঙ্গে পুজো কাটাই। খাটুন্দির সাত দুর্গার পুজো দেখতে প্রতিবছরই ভিড় জমান বহু মানুষ। একসঙ্গে সাতটি দুর্গা প্রতিমা, সঙ্গে কুলদেবতা কৃষ্ণরায়ের পুজো, সত্যিই এ এক অন্যরকম দৃশ্য। তাই এই পুজো শুধু ভট্টাচার্য পরিবারের গর্ব নয়, গোটা গ্রামের ঐতিহ্য।