বাংলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। জাঁকজমক করে মাতৃ আরাধনার পাশাপাশি দুর্গাপুজোয় থিমের সাজ এখন আবশ্যক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাম ও শহর সর্বত্রই থিমের পুজো মণ্ডপের রমরমা। গত কয়েক বছরে পুজো মণ্ডপে থিমের সাজ আরও বেড়েছে। প্রতিবছর নতুন থিমের সাজে সাজছে মণ্ডপগুলি। সেই পথ অনুসরণ করে এবারে বেতর সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির পুজো মণ্ডপের এবারের থিম প্রাচীন ‘বেতর বন্দর’।
advertisement
হাওড়ার জেলার অন্যতম জনপদ বেতর। ঘন জনবসতির এই জনপদ ছুঁয়ে বয়ে গেছে জাতীয় সড়ক ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল। কাছেই রয়েছে সাঁতরাগাছি ও রামরাজাতলা স্টেশন। কিন্তু এই বেতর যে একসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল তা খুব কম মানুষই জানে। ভাগীরথী ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলের কাছে সরস্বতী নদী পারের বন্দর ছিল এই বেতর।
এখানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক নৌকা এসে নোঙর করত। দেশে-বিদেশের সওদাগরেরা জলপথে এখানে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন। জানা যায় ১৫৭৫ সালে ভিনিসির বণিক সিজার ফেরেদিসি এখানে বাণিজ্য করতে এসেছিলেন। মনসামঙ্গল কাব্যে এর উল্লেখ রয়েছে। এই বন্দর হয়ে নদীপথে বাণিজ্য করতে যেতেন মনসামঙ্গল খ্যাত চাঁদ সওদাগর। ঘাসি, লম্বা পাদি, বাচারি, গয়না ও পাতামের মত বিভিন্ন নৌকা আসা যাওয়া করত এই প্রাচীন বন্দরে।
কালের নিয়মে বদলে গিয়েছে গোটা ছবিটাই। বন্দর থেকে নদীর দূরত্ব বেড়েছে কয়েক কিলোমিটার। একসময়ের প্রাচীন বন্দর এখন ব্যস্ত সড়ক ও বাস স্টপেজ। হারিয়ে যাওয়া সেই ইতিহাসই দুর্গাপুজোর কটা দিন ধরা দিতে চলেছে এই পুজো মণ্ডপে।
আরও পড়ুন: সিসি ক্যামেরা, ফায়ার সেফটি থেকে মোবাইল ভ্যান! বারুইপুরে পুজোয় পুলিশের ত্রিস্তরীয় পরিকল্পনা
এই প্রসঙ্গে পুজো কমিটির সহ-সভাপতি ইন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি জানান, বেতর সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির দুর্গাপুজো এবার ৮৪ তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে। হাওড়ার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই পুজো। প্রতিবছর নিষ্ঠা, ভক্তির সঙ্গে মাতৃ আরাধনা হয়। গত ১০ বছর ধরে এখানে থিমের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে নানা উৎসব অনুষ্ঠান, খুঁটি পুজো হয়। প্রতিবছর পঞ্চমী থেকে দর্শনার্থীদের জন্য মণ্ডপের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই মতো এই বছরও চলছে প্রস্তুতি।
শিল্পী শুভঙ্কর দাস জানান, একটি বন্দর কীভাবে ধীরে ধীরে নগরে পরিণত হল সেই পুরনো ইতিহাসকে মণ্ডপ সাজের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে তুলে ধরা হবে। প্রাচীন বন্দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কিছু ছবি এবং ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা পোস্টার আকারে মণ্ডপের সামনের অংশর দেয়ালে থাকছে। মূল মণ্ডপ অর্থাৎ প্রতিমা সংলগ্ন দেওয়ালে নগরের দৃশ্য ফুটে উঠবে। উপরে ভরা নদীতে নৌকার ভেসে বেড়ানো, অর্থাৎ বন্দরে নৌকার আসা যাওয়ার দৃশ্য থাকবে। মণ্ডপের মাঝখানে একটি বাণিজ্যিক নৌকা রাখা হবে।