অতীতে জমিদারি প্রথা অনুযায়ী দুর্গাপুজো হলেও আজ তা সব অতীত। মুশিদাবাদের বড়ঞাঁ থানার ময়ুরাক্ষী নদীর তীরে অবস্থিত ছোট একটি গ্রাম পাঁচথুপি। এই পাঁচথুপি গ্রামে মোট ২২টি দুর্গাপুজো হয়, তার মধ্যে ১৬টি পারিবারিক দুর্গাপুজো। পাঁচথুপি গ্রামের অন্যতম দুর্গাপুজো এই সিংহবাহিনী বাড়ির দুর্গাপুজো। এই পুজো বড়তরফের দুর্গাপুজো বলে পরিচিত।
আরও পড়ুনঃ অক্টোবরেই অতি শুভ বিরল ভাদ্র রাজযোগ! বিপুল অর্থলাভ এই ৩ রাশির, নতুন সম্পত্তির মালিক হবেন
advertisement
বাড়ির বর্তমান সদস্যরা জানিয়েছেন, “এই দুর্গাপুজোতে বিশেষ পুজো হয়। সপ্তমীর দিন অধরাত্রী পুজো, এই পুজোটি ঢাক ও কাঁসর না বাজিয়ে বিনা বাদ্যযন্ত্র সহকারে বৈদিক মন্ত্রচারণের মধ্যে দিয়ে এই পুজো হয়। পুজোপাঠ সার্ত্যক মতে হলেও পায়েস ভোগ দেওয়া হয় প্রতিদিন। শুধু তাই নয়, দেবীর পুজোপাঠের জন্য পুজোর চারদিন নতুন পিতলের বাসনে ভোগ দেওয়া হয়। এই বাসন প্রতিদিন নতুন দেওয়া হয়।”
আরও পড়ুনঃ অক্টোবরে ৬ গ্রহের গোচর! এই ৪ রাশির জাতক-জাতিকারা যেখানেই হাত দেবেন ফলবে সোনা
পরিবারের অন্য সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রায় ১২৫ ফুট উঁচু সুদৃশ্য মন্দিরটি ১৩৪৯ বঙ্গাব্দে নির্মাণ করেন ঘোষ হাজরা পরিবারের হরিপদ ঘোষ হাজরা। জমিদার পরিবারের ষষ্ঠপুরুষ দেবীদাস ঘোষ হাজরা আনুমানিক সতেরো শতকে হুগলি জেলার পাণ্ডুয়া থেকে এনে দেবী সিংহবাহিনীকে প্রতিষ্ঠা করেন। অষ্টধাতু নির্মিত দেবীই এই পরিবারের গৃহদেবতা। অভিনব দর্শনের এই মন্দিরটি ত্রিতলবিশিষ্ট। প্রথম দুটি তল অষ্টকোণ বিশিষ্ট, দোতলায় মূল মন্দির। তৃতীয় স্তরে চূড়াটি অষ্টকোণ বিশিষ্ট সরু হয়ে উপরে উঠে চূড়ার সৃষ্টি করেছে, তার ওপরে আমলক ও পতাকাদণ্ড।
গর্ভগৃহের সামনে দশমহাবিদ্যার মূর্তি, বিভিন্ন গ্রন্থের উল্লেখ, তৃতীয় স্তরে দশবতার মূর্তি ও দশবতার স্তোত্র খোদিত আছে। ছাদের উপরে পূর্বদিকে সিংহ, প্রবেশদ্বারের দু’পাশে টেরাকোটার কাজ ও দরজায় কারুকার্য রয়েছে। বহুদূর থেকে এই মন্দিরের চূড়া দেখা যায়। পাশেই দালানমন্দিরে শ্রীশ্রীসিংহবাহিনীর চণ্ডীমণ্ডপ রয়েছে। বারো মাস তিরিশ দিন অষ্টধাতুর দেবী মূর্তি (সিংহ বাহিনী মূর্তি বলে পরিচিত) পুজো হয়।
দুর্গাপুজোর পর ত্রয়োদশীর দিন এই পুজো বিশেষভাবে হয়। তবেই সমাপ্তি হয় দুর্গাপুজোর। বর্তমানে জমিদারি জৌলুস না থাকলেও কাল এবং নিয়মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো করে আসছেন পরিবারের সদস্য ও সদস্যরা। পুজো দেখতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন আসেন পাশাপাশি নবমীর দিন ভিড় জমান গ্রামের সাধারণ মানুষ।
কৌশিক অধিকারী