পঞ্চমীতে মহিলারা বানান আনন্দ নাড়ু যা পরবর্তী লক্ষ্মীপুজো কালীপুজো এবং রাসেও প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করেন বাড়ির মহিলারা। অন্ন ভোগ, খিচুড়ি ভোগ এবং পায়েস থাকে প্রতিদিন। কতবেল মাখা এবং ইলিশ মাছ এবং ওলের ডানলা নিবেদন করা হয় ঘরের মেয়ে উমাকে।
আরও পড়ুনঃ প্রবল গর্জনে ফুঁসছে তিস্তা, মেঘ ভাঙা বৃষ্টির পর কী অবস্থা সিকিমের? দেখুন ভয়ঙ্কর ছবি
advertisement
শান্তিপুরের রায় বাড়ির প্রাসাদ-প্রমাণ অট্টালিকা। প্রত্যেকটি দেওয়ালে নোনা ধরা ছাপ স্পষ্ট এবং এই নোনা ধরা পুরনো স্যাঁতস্যাঁতে প্রাসাদের ভিতরেই রয়েছে একাধিক ইতিহাসের লুকোচুরি। একসময় এই বাড়ির জমিদার মতি রায় শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরি, মতিগঞ্জ মোড় এলাকায় বিভিন্ন উন্নতিকল্পে জমি দান করেন।
কালের নিয়মে, এখন জমিদারি গিয়ে থেকেছে তলানিতে, এত বড় দালান বাড়ি রক্ষা করতে এবং বিভিন্ন ব্যয়বহুল পুজোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত কয়েকজন শরিকের। কারণ রায় পরিবারের সদস্যরা বেশিরভাগ কর্মসূত্রে থাকেন বাইরে, দুই একজন খোঁজখবর এবং আর্থিক সহযোগিতা করলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রায় বাড়ির প্রতি আবেগ কমেছে মাত্র দুই-এক প্রজন্মর পরেই। তার ওপর বেশ কয়েকবার ঠাকুরের গহনা চুরির পর আগামীতে পুজো নিয়ে সংশয় রয়েছেন শান্তিপুরে ঐতিহ্যের আবেগ আঁকড়ে ধরে থাকা দুই-একজন শরিক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির কাছে গেলেও , সরকারি উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পারেননি তারা।
কথিত আছে, ১৪-১৫ পুরুষ আগে গৌর চাঁদ রায় গৌড়বঙ্গে তার জমিদারির প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তবে মুঘলদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিগ্রহ গৌর হরি ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে চুঁচুড়া ও পরে শান্তিপুরে চলে আসেন। তাদের অবস্থা ফিরতে শুরু করে রাজার তহশীল পদে যোগ দেওয়ার পর থেকে। তারপরেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় এই প্রাসাদ প্রমান বাড়ি এবং শুরু হয় এই দুর্গাপুজোর।
জানা যায়, একদা এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী গৌড় হরি ঠাকুরের পুজো করছিলেন। সেই সময় হঠাৎই এক তৃষ্ণার্ত মহিলা তার থেকে জল চান। জল দিতে চাইলে গঙ্গার জল চেয়ে বসেন ওই মহিলা। গঙ্গার জল এবং নাড়ু খেয়ে চলে যান ওই মহিলা পরে গৃহকর্ত্রী ওই মহিলাকে খুঁজতে লোক পাঠালেও তাকে আর পাওয়া যায় না। এরপর রাতেই মেলে মায়ের স্বপ্না দেশ। স্বপ্নের মধ্যে গৃহকর্ত্রীকে মা বলেন, তুই আমার পুজো কর। গৃহকর্তী তখন জানান, আমাদের অবস্থা এখন ভাল নয়, কীভাবে পুজো করব। তখন মা বলেন তুই আমায় কুলো এঁকে পুজো কর। তারপর প্রথম কুলো একেই শুরু করা হয় রায় বাড়ির এই দুর্গাপুজো। কুলোয় এঁকে পুজো করার কারণে নাম হয় কুলোদেবী। এরপরেই ধীরে ধীরে মায়ের মূর্তি গড়ে শুরু করা হয় তার পুজো। তবে যেহেতু মা এই বাড়িতে একাই এসেছিলেন তাই এখানে শুধু মায়ের একার মূর্তি গড়া হয়। থাকেন না তার সন্তানেরা। তবে সন্তানেরা না থাকলেও পুরোহিত দিয়ে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ-সহ সকলের নামেই নিবেদন করা হয়ে থাকে।
Mainak Debnath