একসময়ে জাঁকজমকে পুজো হত এখানে। কিন্তু এখন সেই পুজোয় ভাঁটার টান পড়েছে। বাঁকুড়ার সোমসার গ্রামের পালেদের পুজো প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো। আড়ম্বরের বাহুল্য নিয়ে মনে খেদ থাকলেও পুজোর চারদিন নিখাদ আনন্দে ডুব দেন পালবাড়ির সদস্য ও পরিজনরা। পুজোর আচার অনুষ্ঠানেও থাকে না কোনও খামতি। এই পুজোর পিছনে রয়েছে বিশেষ ইতিহাস।
advertisement
প্রায় ২৫০ বছর আগে কাপড়ের ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে উঠেছিল বাঁকুড়ার সোমসার গ্রামের পালেরা। তাঁদের ব্যবসা কলকাতা কেন্দ্রিক হলেও গ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অটুট । জলপথে কাপড় বোঝাই করে পালেদের বজরা এসে ভিড়ত গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে। পালেদেরই পূর্ব পুরুষ চন্দ্রমোহন পাল নিজের ব্যবসার প্রয়োজনে গঙ্গার তীরে একটি ঘাট নির্মাণ করেন। সেই ঘাট এখনও চাঁদপাল ঘাট নামে পরিচিত। ব্যবসার মুনাফায় সেসময় কলকাতা, বর্ধমান ও সোমসার গ্রামে সম্পত্তি বাড়ান পালেরা। সোমসার এলাকাতেই মোট ৬টি তালুক কিনে শুরু হয় জমিদারি। জমিদারি প্রতিষ্ঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সোমসারের জমিদার বাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো।
তখন পুজো ঘিরে জাঁকজমক কম হতো না। আলোর রোশনাই, নহবতের সুর, যাত্রাপালা, রামলীলা, পুতুল নাচ ও কবিগানের আসরে জমে যেত পুজোর চারটে দিন। বস্ত্র বিতরণ করা হতো প্রজাদের। সেই কাপড় বজরা বোঝাই হয়ে সোমসারের দামোদর নদের তীরের ঘাটে ভিড়ত। আজ সেসবই ইতিহাস। পুজোর সেই জেল্লা আজ ম্লান। তবু ঐতিহ্যের টানে আজও দুর্গাপুজো জারি রেখেছে এই পরিবার। আনন্দে মাতেন আজও।
আরও পড়ুন- দুর্যোগে ভেসে গিয়েছে দোকান! অভাবের মধ্যে তিন ইঞ্চির চাল দিয়ে দেবীমূর্তি গড়ে নজির
কালের মন্দিরা সুর তুলে জানান দেয় সময়ের সঙ্গে জৌলুসে ভরা পুজো তলিয়েছে কালের গর্ভে। হাতি, ঘোড়া, রথ, গয়নার সম্ভার আজ গল্পকথা। তবু এতকিছুর মধ্যেও মায়ের আরাধনা বজায় রেখেছেন পালেরা। পরিসরে ছোট হলেও আন্তরিকাতায় মাকে আবাহন জানান তাঁরা।
মৃত্যুঞ্জয় পাল