২০০৯ সালের সেই ভয়াবহ সময়েই পিড়াকাটা সংলগ্ন জঙ্গলঘেরা একটি গ্রামে জন্ম লাবনী’র। মাধ্যমিকে ৯২ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে প্রত্যন্ত বহড়াবনী গ্রামের সেই লাবনী মাহাতো-ই মুখ উজ্জ্বল করেছে বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ গ্রামবাসীদের। পড়াশোনাতে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিল পুলিশ। ডাক্তার হতে চায় শালবনীর সিভিক কন্যা। তার এই স্বপ্নপূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার নিজে।
advertisement
সদ্য প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফলাফল। পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী লাবনী এবার মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৪৭ নম্বর (প্রায় ৯২.৫ শতাংশ)। অঙ্কে ৯৬, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৩ নম্বর পাওয়া লাবনী ডাক্তার হতে চায়। লাবনীর বাবা কিনু মাহাত পেশায় সিভিক ভলেন্টিয়ার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। জানিয়েছেন, “আমরা লাবনীর জন্য গর্বিত। আগামীদিনে ও আরও এগিয়ে যাক। আমরা সর্বতোভাবে ওর পাশে থাকব।”
একসময়ের মাও ‘আঁতুড়ঘর’ শালবনী ব্লকের পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের আরও বেশ কয়েকজন ‘কন্যাশ্রী’-ই এবার নজরকাড়া ফল করেছে। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে বিদিশা লাহা, ৬৭৩। তারপর যথাক্রমে- লাবনী মাহাত (৬৪৭), শ্রেয়সী পাল (৬৪২), মল্লিকা মাহাত (৬৪২), রিম্পা মাহাত (৫৯৬)-রা। ক্লাসে বরবারই দ্বিতীয় স্থান অধিকার করত লাবনী। মাধ্যমিকেও সেই সাফল্য বজায় রেখেছে লাবনী।
বাবা মা ও এক বোনের সঙ্গে একচিলতে মাটির বাড়িতে কোনওমতে দিন কাটে চারজনের। সিভিক ভলেন্টিয়ারের সামান্য বেতনে চারজনের সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে মেয়ের জন্য আলাদা করে গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থাও করতে পারেননি কিনু! কাজেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য ছাড়া, কোচিং সেন্টারের ব্যাচই ছিল লাবনীর ভরসা।
লাবনীর স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। পিড়াকাটা হাইস্কুলেই বিজ্ঞান শাখায় ভরতি হয়ে নিটের জন্য প্রস্তুতি নিতে চায় সে। স্বয়ং পুলিশ সুপারের আশ্বাস পাওয়ার পর কিনু বলেন, “আমি গর্বিত! স্যারকে অনেক ধন্যবাদ ও প্রণাম জানাই।” তবে আগামীতে ভাল ফলাফল করে বাবা-মায়ের পাশাপাশি জেলার মুখ উজ্জ্বল করুক প্রত্যন্ত গ্রামের লাবনী মাহাতো, চাইছেন সকলে।
Ranjan Chanda