‘আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাই এখানেই থাকি।তেমন কোন কাজও নেই তাই নদীর মাছ, কাঁকড়া ধরেই কোনমতে চলে পেট ৷’ কেমনভাবে চলে জীবন সংগ্রাম৷ কথাগুলো বলতে গিয়ে আক্ষেপের সুর সুন্দরবনের বাসিন্দাদের৷ খুশবু মণ্ডল নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা দীর্ঘশ্বাস নিতে নিতে জানালেন, ‘‘আমরা ভয়ে ভয়ে থাকি। কখন যে দুর্যোগে বসতবাড়ীটুকুও চলে যাবে নদীগর্ভে তা কেউ বলতে পারে না।’’
advertisement
সুন্দরবনের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বাঁধের ওপর ঘর তৈরি করে বাস করছেন অনেকেই। নদী ফুলেফেঁপে উঠলে, সর্বস্ব চলে যাওয়ার আতঙ্ককে সঙ্গী করেই জীবন অতিবাহিত করছেন তারা। এই বিপুল ঝুঁকি মাথায় নিয়ে যারা সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করছেন তাদের কাছে জীবনে বেঁচে থাকার লড়াইটা বড়ই কঠিন।
আরও পড়ুন - Big News: সিএসকে ম্যাচের আগেই দিল্লি ক্যাপিটাল্স শিবিরে দুঃসংবাদ, ফের করোনা হানা
২০০৯ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আয়লা বদলে দিয়েছে সুন্দরবনের জীবনযাত্রার পুরো চিত্রটাই। তার পরেও বহু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে সুন্দরবনকে। সেই ভয়ঙ্কর দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানেও। কমেছে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের দৈনিক আয়ের পরিমান। নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরা, কিম্বা মধু সংগ্রহ কিছুক্ষেত্রে চাষবাসের মতো চিরাচরিত জীবিকা আঁকড়ে কোনক্রমে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন এই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় কতখানি বদলে দিয়েছে সুন্দরবনের ছবিটা ? সন্দেশখালির বাসিন্দা মোফিসা বিবি জানালেন, ‘‘আয়লা পরবর্তী সময় থেকে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ধাক্কা আজও বহন করে চলেছি আমরা।তবে তার চেয়েও বড় ধাক্কা হল ক্রমাগত আশা প্রাকৃতিক বিপর্যয়৷তাতে সুন্দরবনের মানুষের যেটুকু সম্পদ ছিল, তাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন আর রোজগারের তেমন পথ নেই। চোখের সামনে যে কতগুলো পরিবার আর্থিক কষ্টে ভুগছে তা গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আমাদের খবর আর কে রাখে !’’
পরপর আসা ঘূর্নিঝড়ের দাপটে বিপর্যস্ত হয়েছে সুন্দরবনের জীবনযাত্রা। জীবন এখানে কঠিন। লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় সুন্দরবনের মানুষদের। প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তৈরি হওয়া বিপদ গ্রাস করছে সুন্দরবনকে। হারিয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ, বাদাবন। নদীতে বাড়ছে জলের স্তর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভের জঙ্গলকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সুন্দরবনের অধিবাসী ও জীববৈচিত্র্যকে বাঁচাতে হলে বর্তমান পরিস্থিতির বদল আনতে হবে। বাংলা নয় দেশের গর্ব এই সুন্দরবনকে বাঁচাতে বাড়াতে হবে সচেতনতা। তবে যত দিনে হুঁশ ফিরবে, ততদিনে কোন বড় ক্ষতি হয়ে যাবে না তো ? আশঙ্কা নিয়ে প্রহর গুনছেন সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।
Rudra Narayan Roy