আরও পড়ুন: বাইককে উড়িয়ে দিয়ে নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ল শিক্ষকদের গাড়ি! তারপর…
প্রতিদিন একবার করে অন্তত ‘বান্ধবী’ ইফাফতের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়ার জন্য বারবার পুলিশকর্তাদের অনুরোধ করছেন মৃত শ্রেয়াংশের মা শান্তা শর্মা। কিন্তু দেখা করতে না পারায় শেষে অন্ততপক্ষে ফোনে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়ার আবদার করেন তিনি। বান্ধবী খেয়েছে কিনা, কেমন আছে, ভাল থাকছে কিনা এইসব বারবার পুলিশ কর্তাদের জিজ্ঞেস করছেন তিনি। মৃত ছেলের বিষয়ে যেন তেমন একটা তাপ উত্তাপ নেই শান্তার! এই ধরনের আচরণে রীতিমত বিস্মিত তদন্তকারীরা। তাঁরা বোঝার চেষ্টা করছেন এই খুনের আসল মোটিভটা কী?
advertisement
শিশু খুনের ঘটনায় ধৃত মা শান্তা শর্মাকে উত্তরপাড়া থানায় এবং তাঁর ‘বিয়ে করা’ বান্ধবীকে ইফাফত পারভিনকে শ্রীরামপুর মহিলা থানায় রাখা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের কাজ চলছে উত্তরপাড়া থানাতেই। তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্তাদের মতে, ছেলেকে রেখে দিয়ে দিব্যি শান্তা বান্ধবীর সঙ্গে চলে যেতে পারতেন। অন্যত্র সংসার পাতাটা ছিল সহজ পথ। তাহলে কেন সন্তানকে খুন করতে হল? ঠিক এখানে গিয়েই এক ভয়ঙ্কর মানসিক বিকৃতির দিকে আলো ফেলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, প্রথম দিন থেকেই স্বামী পঙ্কজ শর্মাকে পছন্দ ছিল না শান্তার। তাঁর মাথার টাক নিয়ে ছিল তীব্র আপত্তি। তবু এতদিন বাধ্য হয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে ঘর করতে। বিয়ের দু’বছর পর ছেলে শ্রেয়াংশের জন্ম হয়। এতদিন নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে চলতে একপ্রকার বাধ্য হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেককে শিক্ষা দেওয়ার মনোবৃত্তি তৈরি হয়ে থাকতে পারে তাঁর মধ্যে। সেই কারণেই হয়ত বান্ধবীর সঙ্গে পরিকল্পনা করে নিজেরই সন্তানকে খুনের ব্যবস্থা করেন শান্তা।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
জানা গিয়েছে কোন্নগরের শ্বশুরবাড়িতে শ্বশুর ওমপ্রকাশ শর্মা, শাশুড়ি প্রেমলতা শর্মা, এক দেওর প্রভাত শর্মা ও জায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন শান্তা। সঙ্গে স্বামী পঙ্কজ ও ছেলে শ্রেয়াংশ’ও ছিল। আর এক দেওর প্রবীর পরিবার নিয়ে শিলিগুড়িতে থাকতেন। শান্তার স্বামী পঙ্কজ জানিয়েছেন, ইফাফতের সঙ্গে দ্রুত তাঁর স্ত্রীর বন্ধুত্ব গভীর হয়ে উঠেছিল। প্রতি মাসে ২-৩ বার ইফাফাত পারভিন তাঁদের বাড়িতে আসতেন। তবে তাঁর অলক্ষে আরও বেশিবার এসে থাকতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পেরেছেন ছেলে শ্রেয়াংশকে হামেশাই লাঠিপেটা করতেন শান্তা। তবে পুলিশের জেরায় জানিয়েছেন, পড়া না পারলে তবেই মারতেন।
এদিকে পুলিশের জেরায় এখনও শ্রেয়াংশকে খুনের কথা স্বীকার করেনি তার মা শান্তা বা মায়ের ‘বান্ধবী’ ইফাত পারভিন। শান্তা বারবার বলছেন, তিনি খুন করেননি। কিন্তু সন্তান মৃত্যুর কোনও শোকই যেন তাঁর মধ্যে নেই। বদলে বান্ধবীর গ্রেফতার হওয়াটা তাঁকে বেশি বিচলিত করছে। এই পরিস্থিতিতে মনোবিদের সাহায্য নিচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। ইতিমধ্যেই শান্তাকে পরীক্ষা করে দেখেছেন মনোবিদ।
রাহী হালদার