ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্য়াম্পে মৃত্য়ু হয় বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখের। যা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় হয়ে যায় রাজ্য। ঘটনার পর পরই সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে রামপুরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবি। পরে সিআইডি ঘটনার তদন্তভার নিজেদের হাতে নেন।
শুধুমাত্র স্বামীর মৃত্যু নিয়েই নয়, সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনেন লালন শেখের স্ত্রী। রেশমা বিবি জানিয়েছিলেন, লালনের মৃত্যুর আগে তাঁদের বাড়ি সিল করে দিয়েছিল সিবিআই। তারপরে সেখানে চুরির ঘটনা ঘটে। দরজা বাইরে থেকে তালা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও, কে বা কারা কৌশলে সেই বাড়ির ভিতরে ঢোকে এবং সব তছনছ করে। এই অভিযোগ সিআইডি-কে জানাতেই, তারা এসে ফের বাড়ি তালাবন্ধ করে দেয়।
advertisement
আরও পড়ুন: তৈরি হয়েছে বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত, বড়দিনে আবহাওয়ার বড় আপডেট হাওয়া অফিসের
এদিন রেশমা বিবির সেই অভিযোগের তদন্তেই বগটুইয়ে যায় ফরেন্সিক দল। সিল খুলে লালনের গোটা বাড়ি ঘুরে দেখেন তাঁরা। নমুনা সংগ্রহ করেন। লালন শেখের স্ত্রী বলেন, "আমার অভিযোগ ছিল সিবিআইয়ের উপরে। আমার বাড়ি, আমার স্বামী দুই-ই ওদের হাতে ছিল। দুটোই শেষ করে দেওয়া হয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট নিতে এসেছিল, সিআইডির দল। ওঁরা নিয়ে গেলেন। এবার যে করেছে তার আসল রহস্য ফাঁস হবে।"
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে তৃণমূলের 'দরজা খোলা' নিয়ে পাল্টা দিলীপ ঘোষ, করলেন মারাত্মক দাবি!
এর পরে আবারও স্বামীর মৃত্যু নিয়ে সিবিআই-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করান রেশমা বিবি। বলেন, "আমার স্বামীকে যে নিয়ে গেল, গোটা গ্রামের লোককে দেখিয়ে নিয়ে গেল যে, শেষ দেখা দেখে নাও। ওরা ওটাই করল। চার ঘণ্টার মধ্যে আমার স্বামীকে শেষ করে দিল। আমি ন্যায়বিচার চাইছি।"
এই প্রথম নয়, এর আগেও বগটুই গ্রামে গিয়ে লালন শেখের স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন সিআইডি-র তদন্তকারীরা। হেফাজতে থাকা অবস্থায় কী করে বন্দির মৃত্যু হল, তা নিয়ে আদালতেও ভর্ৎসনার মুখে পড়ে সিবিআই।
অন্যদিকে, বগটুই কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত লালন শেখ মৃত্যু রহস্যের পর তাঁর স্ত্রীর করা এফআইআর নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। গত শনিবার রানাঘাটে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এফআইআর লিখেছেন রঞ্জিত গঙ্গোপাধ্যায়। আসানসোলে জেল হেফাজতে থাকাকালীন লালন শেখের স্ত্রীর বয়ানের ডিক্টেশন দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁকে সাহায্য করেছেন সিউড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার মহম্মদ আলি। গোটা এফআইআর প্রক্রিয়াটাই তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে তৃণমূল আর পুলিশ সম্পন্ন করেছে। লালন শেখের স্ত্রীকে দিয়ে শুধু সই করানো হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ জনৈক একজন আইপিএস, যার মামলা শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন গত সপ্তাহে তিনি সল্টলেক বিধাননগরে লালন শেখের স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন একজন আইনজীবীর বাড়িতে। কী কী বলতে হবে তার ট্রেনিং দিতে। আমার কাছে সব ছবি আছে। সন্ধ্যা সাতটায় গিয়েছিলেন, রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ছিলেন সেই সিনিয়র আইনজীবীর বাড়িতে। আমাদের কাছে যথাযথ তথ্য প্রমাণ রয়েছে। ঠিক সময় সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেব।’’