তিন বছর আগে প্রায় বিনামূল্যে ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালের (Thakurpukur Cancer Hospital) চিকিৎসকদের সাহায্যে নিজের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন অর্থাৎ অটোলোগাস অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হয় শাহজাদার। আর বর্তমানে শাহজাদা শুধু সুস্থ নয়, সেলাইয়ের কাজ করে আগামী দিনে গোটা পরিবারের ভরসা স্থল হয়ে উঠতে চাইছে সে। ভবিষ্যতে একজন দরজি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় শাহজাদা। তার একটাই কথা,'নিজের উপর কখনও আমি বিশ্বাস হারাইনি। ক্যান্সার জেনেও আমি সবসময় ভেবেছি যে আমি ফিরে আসবই। ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসকরা যেভাবে আমাকে সব সব সময়ে মনোবল যুগিয়েছে,তাতে আমি অর্ধেক সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।'
advertisement
অন্যদিকে শাহজাদার মা নুরজাহান বিবি বলেন,' আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা যা তাতে আমরা কলকাতা-সহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েছিলাম সর্বত্রই লাখ লাখ টাকার বাজেট দিয়েছিল। আমাদের সে সামর্থ্য ছিল না। শেষে ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুবই অল্প টাকায় প্রায় সমস্ত ওষুধ বিনা পয়সায় দিয়ে আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে তুললেন। আল্লাহ ওদের ভালো করুক।'
কী এই বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন? কোন ধরনের ক্যানসারে এই চিকিৎসা কাজে দেয়? যে সমস্ত রোগী হজকিনস লিম্ফোমা, মাইলোমা বা নন-হজকিনস লিম্ফোমার মতো ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং যাদের উচ্চ মাত্রায় কেমোথেরাপি চিকিৎসা নিতে হয় তাঁদের ক্ষেত্রে এই অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হয়। ঠাকুরপুকুর ক্যানসার (Cancer) হাসপাতালের অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন বিভাগের অধিকর্তা চিকিৎসক পার্থপ্রতিম গুপ্ত বলেন,'পশ্চিমাঞ্চল প্রতিস্থাপন দুই প্রকার। অটোলোগাস অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন, যেখানে রোগীর নিজস্ব স্টেম সেল অস্থি মজ্জার কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। অ্যালোজেনিক অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন, যেখানে স্টেম সেল রক্ত পরীক্ষা দ্বারা নির্ভর অন্য সুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া যায় এবং রোগীর দেহে সংযুক্ত করা হয়।'
ঠাকুরপুকুর সরোজ গুপ্ত ক্যানসার সেন্টার এর অধিকর্তা চিকিৎসক অর্ণব গুপ্ত জানান,'২০১২ সালে প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এখানে এই সেন্টারের উদ্বোধন করেন। ইংল্যান্ড থেকে আমরা বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে চিকিৎসক নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি বিশেষ টিম গঠন করি, যাঁরা এই অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন এর কাজ করে। গত সাত বছরে ৭৫ জন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে আমরা স্টেম সেলের মাধ্যমে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করে সুস্থ করে তুলেছি।'
আরও পড়ুন- ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের অধীনে চলছে নিয়োগ, কীভাবে আবেদন করবেন জানুন
এই হাসপাতালের সম্পাদক অঞ্জন গুপ্ত জানান,'অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের খরচ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ন্যূনতম পনেরো থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা। দক্ষিণ ভারত, মুম্বাইয়ের হাসপাতালের খরচ কুড়ি থেকে ত্রিশ লক্ষ টাকা। আর ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে (Thakurpukur Cancer Hospital) এই খরচ চার লক্ষ টাকা। প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও প্রতিস্থাপন হয়।'
আরও পড়ুন- পড়ুয়াশূন্য বিদ্যালয়ে ‘পড়ান’ একজন শিক্ষিকা! বিস্মিত হাইকোর্ট
করোনা অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন তিন মাসের মধ্যে ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতাল (Thakurpukur Cancer Hospital) ১১ জন রোগীর দেহে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করে তাঁদেরকে সুস্থ করে তোলা হয়েছে। ত্রিপুরার আগরতলার বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সী মধুপর্না ভট্টাচার্য, একজন প্রতিশ্রুতিবান ফটোগ্রাফার দু'বছর আগে হজকিন লিম্ফোমা রোগে আক্রান্ত হন। দেশের বহু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সত্ত্বেও তার ক্যান্সার তো দূর হয়নি, বরং বারবার করে ফিরে আসে। ঠাকুরপুকুর হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করে বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ মধুপর্না চলচ্চিত্র জগতের একজন বিশেষ চিত্রগ্রাহক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।