শোনা যায়, একবার প্রতিমার উচ্চতা ছোট করা হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই জমিদার বাড়িতে ঘটে এক অকাল মৃত্যু। পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস, দুর্গাদেবীকে ছোট করে গড়ার কারণেই এই বিপদ নেমে আসে। তারপর থেকে আজও প্রতিমার উচ্চতা অটল রয়েছে ছয় ফুটেই। প্রতিবছর একই কাঠের কাঠামোতে গড়া হয় প্রতিমা, সেই একই পরম্পরা বজায় রেখেই। ব্রিটিশ আমলে চন্দনপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো ছিল অতি জনপ্রিয়। তখনকার দিনে এই বাড়িতেই হত যাত্রাপালা, নাটক আর নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
advertisement
দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমাতেন এই উৎসব দেখার জন্য। যদিও সময়ের সঙ্গে বদলেছে অনেক কিছু, হারিয়েছে সেই জৌলুস, কিন্তু হারায়নি পুজোর আবেগ। এখনও স্থানীয় বাসিন্দা থেকে দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা ভিড় জমান এই ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে। আজ জমিদার পরিবারের অনেক সদস্যই রয়েছেন বিদেশে। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় সবাই ছুটে আসেন পৈতৃক ভিটেতে। একসঙ্গে মিলিত হন প্রাচীন বাড়িতে, জেগে ওঠে একতার আবহ। সাবেকি প্রতিমা, পুরনো রীতিনীতি আর পারিবারিক আবেগ মিলে পুজোকে ঘিরে সৃষ্টি হয় এক অনন্য পরিবেশ।
চন্দনপুরের এই দুর্গাপুজো তাই শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক জীবন্ত ইতিহাস। দিঘার সমুদ্রতট থেকে অল্প দূরেই রয়েছে আড়াইশো বছরের এই ঐতিহ্যের আসর। স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুনে পোড়া জমিদার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই আজও দীপ্যমান দুর্গাপুজোর আলো, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে নিয়ে চলেছে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।