বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা। দলের একাংশ মজা করে বলে নামে সংখ্যালঘু। দলেও ওরা সংখ্যালঘু। রাজ্য বিজেপির সেই সংখ্যালঘু মোর্চার তিন দিনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ শিবির হতে চলেছে রাজ্যের সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত জেলা মূর্শিদাবাদের বহরমপুরে। আগামী ১৮ থেকে ২০ নভেম্বর এই শিবিরের উদ্বোধন করতে রাজ্য আসার কথা সংখ্যালঘু মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি, শাহ ঘনিষ্ঠ নেতা জামাল সিদ্দিকির। রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার এই কর্মসূচিকে ইতিমধ্যেই কটাক্ষ করেছে বাম, কংগ্রস ও তৃণমূল।
advertisement
আরও পড়ুন: 'প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলব না', সেতু বিপর্যয়েও মোদিকে নিয়ে নীরবই থাকলেন মমতা
গুজরাত ভোটের মুখে নাগরিকত্ব ইস্যুকে
এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রাসঙ্গিক করতে চাইছে রাজ্য বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা গুজরাতের দৃষ্টান্তকে সামনে এনে এ রাজ্যেও সিএএ লাগু করার দাবিতে সরব হয়েছেন। সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও। যদিও, বিজেপির দাবি, শিক্ষা দুর্নীতি থেকে চোখ ঘোরাতে কখনও সেতু ভাঙা কখনও নাগরিকত্বকে হাতিয়ার করছেন মমতা। ঘটনা যাই হোক, মদন মিত্রের রসিকতায় বল ঠিক রাস্তাতেই গড়াতে শুরু করেছে। দু' এক দিনের মধ্যেই সব বোঝা যাবে।
এদিকে, সেই বোঝা বুঝির মধ্যেই রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা তিন দিনের প্রশিক্ষন শিবির করতে চলেছে বহরমপুরের একটি রিসর্টে। প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই রাজারহাটে বৈদিক ভিলেজে রাজ্য বিজেপি-র বৈঠক চলেছিল তিন দিন ধরে৷ পঞ্চায়েতের আগে রাজ্যে সংখ্যালঘু মোর্চার শিবির ও তার স্থান নির্বাচন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন: ‘এ সব আমরা হতে দেব না’, গুজরাতে হওয়া নাগরিকত্বের ঘোষণা নিয়ে বিস্ফোরক মমতা
বিগত ২০২১- এর বিধানসভা ভোটে বিজেপি সাকুল্যে ৩৮ শতাংশের কিছু বেশি ভোট আর ৭৭ টি আসন পেলেও, সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটের ঝুলি কার্যত শূন্যই রয়ে গেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিশেষ কোনও প্রত্যাশা নেই। আসল লক্ষ্য ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন। বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির কারণে রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত মূর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, বীরভূম, নদিয়া, হাওড়া ও দক্ষ্মিণ ২৪ পরগণার মতো অন্তত সাতটি জেলায় দলের বুথ সংগঠন খুবই দূর্বল। বহু এলাকায় নেই বললেই চলে। ট
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের জন্য দলের বুথ সংগঠনকে গুছিয়ে নেওয়াই বিজেপির মূল উদ্দেশ্য। কারণ, লোকসভা ভোট যত এগোবে,নাগরিকত্ব ইস্যুতে বিজেপির সক্রিয়তাও তত বাড়বে। সে জন্য দেশীয় মুসলিমদের আশ্বস্ত করতে হবে।
সম্প্রতি, সংঘপ্রধান মোহন ভাগবতকে কখনও সংঘ ঘনিষ্ট ইমামদের কাছে , কখনও মাদ্রাসায় পাঠরত ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে জাতীয়তাবাদী মুসলিম হওয়ার পাঠ দিতে দেখা গিয়েছে। এ রাজ্যেও সংখ্যালঘু মুসলিমদের আশ্বস্ত করতে বিজেপি ও সংঘ পরিবার একই নীতি নিয়ে এগোবে। তবে, আখেরে তাতে কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ছে দলের অন্দরেই।
রাজ্যে নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থা মাথায় রেখেই, সংখ্যালঘু মোর্চার তরফে তাদের এই কর্মসূচিকে প্রচারের আলোয় টেনে আনতে কোনণ কার্পণ্য্য করছে না বিজেপি। যদিও, সিপিএম নেতা সূজন চক্রবর্তীর মতে, নাগরিকত্ব নিয়ে সরব হয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমের সমর্থন পাওয়ার আশা করা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। তৃণমূলের নেতা তাপস রায় বলেন, মূর্শিদাবাদে গিয়ে বৈঠক করলেই জেলার সংখ্যালঘুরা বিজেপিকে সাদরে বরণ করে নেবে না। আসলে, কেন্দ্রের টাকায় মোচ্ছব হবে তিন দিন ধরে, কাজের কাজ কিছু হবে না।