কথোপকথন তো দূরের কথা, একটা ছোট বার্তা পাঠাতে গেলেও গ্রামের বাইরে কয়েকশো মিটার দূরের এক নির্জন মাঠই ভরসা। চাষের ফাঁকে বা বাড়ির কাজ সামলে সেই মাঠে ছুটে যেতে হয় কথা বলার জন্য। শুধুই কী অসুবিধা ফোনে কথা বলা? আসলে সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। আধুনিক যুগে যেখানে শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে এই গ্রাম পিছিয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। অনলাইন ক্লাস বা শিক্ষাসংক্রান্ত কোনও তথ্য পেতে গেলে নেটওয়ার্কই বড় বাধা।আরও ভয়ানক ছবি দেখা যায় অসুস্থতা বা বিপদের সময়।
advertisement
আরও পড়ুন: ৩ সপ্তাহ গৃহবন্দি, গ্রামের সবাই…! অবাক করা ঘটনা বীরভূমে, কেন জানলে লজ্জা পাবেন
অন্তঃসত্ত্বা মহিলা প্রসব যন্ত্রণায় কাতর? কিম্বা কারও হঠাৎ শ্বাসকষ্ট? অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে ফোনে যোগাযোগ করতে হলে গ্রামের বাইরে ছুটতেই হয়। মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, জীবন সংশয়ে পড়েন রোগীরা। এ প্রসঙ্গে বীরভূমের পেঁচালিয়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক ভক্তহরি মণ্ডল বলেন, “এই যুগে মোবাইল থাকা সত্ত্বেও ফোন করতে বাইরে যেতে হবে—এটা ভাবাই যায় না। আর কেউ মারা গেলেও, খবর পেতে দেরি হয়। আনন্দ-দুঃখের খবরে শূন্যতা থেকেই যায়।”
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এই পেঁচালিয়া যেন আজকের ভারতবর্ষের এক অদ্ভুত প্রতিচ্ছবি। একদিকে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্লোগান, অন্যদিকে এক গ্রাম নেটওয়ার্কের আশায় চেয়ে আছে আকাশের দিকে। প্রশ্ন উঠছে—কবে মিলবে মোবাইল টাওয়ার? কবে ফিরবে নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা? কবে পেঁচালিয়াও প্রকৃত অর্থে যুক্ত হবে ‘সংযুক্ত’ ভারতের সঙ্গে? আজও উত্তর অনিশ্চিত। তবু আশায় বুক বাঁধছে পেঁচালিয়ার মানুষ। কারণ, তারা জানে—কথা বলার অধিকারও এক ধরনের মৌলিক অধিকার।
সুদীপ্ত গড়াই