আজ থেকে প্রায় এক বছর আগে রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছিলেন বৃদ্ধা। আর ঠিক সেই রাস্তা দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিলেন দমকল বাহিনীরাও। ওই অবস্থায় দমকল বাহিনীর কর্মীরা দেখতে পান সেই বৃদ্ধাকে। বৃদ্ধাকে তড়িঘড়ি সেখান থেকে তুলে নিয়ে এসে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করান তাঁরা।
সেদিন থেকে আজ প্রায় এক বছর হয়ে গেল রামপুরহাট হাসপাতালের সার্জারি বিভাগই যেন তাঁর ঘর হয়ে উঠেছে। আর তাঁর পরিবার হয়ে উঠেছেন চিকিৎসক, নার্স, এবং হসপিটালের কর্মীরা। বৃদ্ধার সমস্ত আবদার যেন বাড়ির লোকের মতই শোনেন হসপিটাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে ডাক্তার এবং নার্সেরা।
advertisement
তবুও একাকীত্বের অনুভূতি কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে প্রায় বছর ৬৩-র লতিকা দত্তকে। কথা বলে জানা গেল তাঁর বাড়ি বীরভূমের দুবরাজপুর। বাড়িতে তাঁর ছেলে রয়েছে। কিন্তু ছেলে তাঁকে এখনও নিতে আসেননি! আবার অন্যদিকে তিনি এটাও জানাচ্ছেন তাঁর ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তাই সার্জারি বিভাগের বেডে শুয়ে সারাক্ষণ একটাই প্রশ্ন ‘‘ছেলে কী নিতে এল?’’ এভাবে দিন গুনতে গুনতে কেটে গেল প্রায় একটি বছর। তবু যেন ছেলের অপেক্ষা তাঁর দু’চোখে মুখে।
অন্যদিকে তাঁর বক্তব্য, বাড়ির লোক এলেও তিনি এই হাসপাতালের কর্মীদের ছেড়ে কোথাও যাবেন না। হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, মা কি ‘বোঝা’? মাকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল হয়তো ছেলের।
কিন্তু ছেলে আসেনি। যোগাযোগ রাখেনি পরিবারের কেউ। তাই শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছেন লতিকাদেবী। দীর্ঘদিন ধরে একাই হাসপাতালের বেডে থাকেন, কোনও সঙ্গী নেই।
ছেলে তো দূর, পরিবারের কেউ তাঁর খোঁজ নেয় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই যত্ন নিচ্ছে তাঁর৷ তবে তিনি যে দীর্ঘদিন থেকে বেড দখল করে আছেন সেক্ষেত্রে হাসপাতালেরও সমস্যা। তারপরও হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স তাঁর চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি রাখছেন না। কোথায় যেন হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে মায়ার টান পড়ে গেছে লতিকা দেবীর।
সৌভিক রায়