দামোদর নদের উপর কৃষক সেতুর পাশে প্রস্তাবিত ‘শিল্প সেতু’ এবং ডিভিসি-র ইডেন ক্যানেলের উপর সেতুর জন্য ২০২৪ সালের রাজ্য বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন। এরপর প্রকল্পটি দরপত্র পর্যন্ত গড়িয়েছিল, কিন্তু আর্থিক অনুমোদনের জন্য ফাইল আটকে ছিল অর্থ দফতরে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সড়ক পরিকাঠামো তহবিল (CIRF) থেকে মোট ৪০১.২৪ কোটি চেয়ে কেন্দ্রের পরিবহণ দফতরে চিঠি পাঠায়। কেন্দ্রীয় পরিবহণ দফতর ৩৪৭.১১ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা রাজ্য পূর্ত দফতরের সচিবকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: ‘রাত ৯টা, হুমকি দেওয়া হয়েছিল…’ ধনখড়ের পদত্যাগের ‘আসল’ কারণ ফাঁস করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়! নাম জানালেন পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতিরও
কেন্দ্রের চিঠিতে জানানো হয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান-আরামবাগ রোডের (রাজ্য সড়ক ৭) উপর শিল্প সেতু এবং ইডেন ক্যানেল সেতুর জন্য যথাক্রমে ৩৪৫.৯২ কোটি এবং ৫৫.৩২ কোটি টাকার প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে কেবল-সংযোগের মাধ্যমে শিল্প সেতু গড়ে তোলার একটি নকশাও পাঠানো হয়।
প্রাথমিকভাবে, দিল্লির কর্তারা ৬৪০ মিটারের তিন লেনের সেতুর জন্য কেবল সংযোগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এর উত্তরে, রাজ্য পূর্ত দফতর একটি রিপোর্ট জমা দেয়, যেখানে বলা হয় যে, কৃষক সেতুর বয়স হয়েছে এবং এর ওপর গাড়ির চাপ, বিশেষ করে বালির ট্রাক থেকে ক্রমাগত জল পড়ায় সেতুটির ক্ষতি হচ্ছে। কেবল-সংযোগের আধুনিক প্রযুক্তির সেতু হলে তা এই ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে কেন্দ্রীয় পরিবহণ দফতর ৫টি স্তম্ভের উপর কেবল-সংযোগে সেতু তৈরির প্রস্তাবটি অনুমোদন করে।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, শিল্প সেতুর জন্য ২৯৯.২৬ কোটি এবং ইডেন ক্যানেলের সেতুর জন্য ৪৭.৮৫ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে, যা মোট ৩৪৭.১১ কোটি টাকা। প্রস্তাবের বাকি টাকা রাজ্য সরকারকে বহন করতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, চার মাসের মধ্যে প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন নিতে হবে, অন্যথায় কেন্দ্রের বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতিমধ্যে বরাত পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন করে কেন্দ্র টাকা অনুমোদন করায় ও শর্ত চাপানোয় ফের দরপত্র ডাকা হবে, না পুরনো দরপত্রের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে শিল্প সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত হলেই কাজ শুরু শুধু সময়ের অপেক্ষা।
জানা গিয়েছে, কাজের বরাত পাওয়ার ৯১০ দিনের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে। সরকারের জমিতে থাকা অবৈধ দখলদারদেরও উচ্ছেদ করা হয়েছে। একটি সমীক্ষার পর স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে ৮২ জনকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। পূর্ত দফতর এবং সেচ দফতরের হাতে পর্যাপ্ত জমি থাকায় সংযোগকারী রাস্তার জন্য নতুন করে জমি কেনা বা অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না।
এক নজরে শিল্প সেতু ও ইডেন ক্যানেল সেতু
শিল্প সেতু:
* ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাজেটে ঘোষণা।
* প্রস্তাবিত খরচ ছিল ২৪৬ কোটি, কিন্তু পরে সংযোগকারী রাস্তা ও কেবল-সংযোগের জন্য বেড়ে প্রায় ৩৫০ কোটিতে দাঁড়ায়।
* কেন্দ্রের কাছে ৩৪৫.৯২ কোটির প্রস্তাব পাঠানো হয়, যার মধ্যে ২৯৯.২৬ কোটি অনুমোদন পেয়েছে।
* ৬৪০ মিটার লম্বা, ৫টি স্তম্ভের উপর কেবল-সংযোগে তৈরি হবে।
* প্রতিটি স্তম্ভের দু’দিকে ৬টি করে কেবল এবং আলোর ব্যবস্থা থাকবে।
* সেতুর দু’পাশে ফুটপাত থাকবে।
* সংযোগকারী রাস্তা ১২০০ মিটার।
* কৃষক সেতু ও শিল্প সেতুর মধ্যে ৩০ মিটারের দূরত্ব থাকবে।
ইডেন ক্যানেল সেতু:
* ৮০ মিটার লম্বা।
* তিন লেনের সেতু হবে।
* পুরনো সেতু ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে।
এখন অপেক্ষা, কবে এই ‘সেতু-বন্ধন’ শুরু হয় এবং এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলি দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।
—- সায়নী সরকার