দুই ফুট উচ্চতা এবং দশ ইঞ্চির চওড়া বিশিষ্ট প্রস্তর মূর্তিটি নদীর পার থেকে দুই যুবক উদ্ধার করেন। মূর্তি পাওয়ার ঘটনা গ্রামে জানাজানি হওয়ায় ভিড় জমে যায়। নদীর পার থেকে বিষ্ণু মূর্তিটি উদ্ধার করে গ্রামবাসীরা ঠাকুর মন্দিরে রেখে পুজো শুরু করে দেন। কেতুগ্রাম থানার পুলিশ বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধারের ঘটনা জানতে পেরে নারেঙ্গা গ্রামে গিয়ে বহু মূল্যবান বিষ্ণুমূর্তিটি উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে থানায় রাখে। স্থানীয় গবেষকদের মতে উদ্ধার হওয়া মূর্তির গঠনতন্ত্র দেখে অনুমান বিষ্ণু মূর্তিটি পাল যুগের শিল্পকর্ম। মূর্তির রূপ বৈশিষ্ট্য অনুসারে এটি ত্রিবিক্রম বিষ্ণুমূর্তি বলা যেতে পারে। এই ধরনের বিষ্ণুমূর্তি এর আগেও আশপাশ এলাকা থেকে পাওয়া গিয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: বাড়তে পারে আলুর দাম, সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আশার আলো দেখছেন চাষিরা
অজয় নদের দুই পার লাগোয়া গ্রাম থেকে বহুমূল্যবান দেব-দেবীর প্রাচীন প্রস্তর মূর্তি প্রায়ই উদ্ধার হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় অজয় নদের দক্ষিণ পূর্ব দিকে মঙ্গলকোটে খেঁড়ুয়া অঞ্চলে গুপ্ত ও পাল যুগে বিষ্ণুর উপাসকদের বসবাস ছিল। জনপদগুলিতে প্রচুর মন্দির ও মূর্তি ছিল। অনুমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এক সময় মূর্তি-সহ মন্দিরগুলি অজয় নদের গর্ভে বিলীন হয়েছিল। এখন সেগুলি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর অজয় নদের পূর্ব পার মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়া থেকে গ্রামের কাছে অজয় নদ থেকে দুটি বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। কেতুগ্রামের নারেঙ্গা গ্রামে একটি পাওয়া গেল।
আরও পড়ুন: 'ওর কাছে টাকার পাহাড় আছে', অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য দারুণ 'বুদ্ধি' দিলেন সেলিম!
এ ব্যাপারে ইতিহাসের গবেষক সর্বজিৎ যশ জানান, বিষ্ণুর মূলত যোগ ও ভোগ শ্রেণির মূর্তি দেখা যায়। যোগ মূর্তিতে বিষ্ণুর দুই পত্নী সরস্বতী ও লক্ষ্মী অনুপস্থিত থাকেন। কিন্তু ভোগ শ্রেণির মূর্তিতে সরস্বতী ও লক্ষ্মী দুজনেই উপস্থিত থাকেন। ভোগ শ্রেণির মূর্তিই বেশি দেখা যায়। শয়ান বা অনন্তশয়ন মূর্তিতে লক্ষ্মী থাকলেই চলবে। ভোগস্থানক রূপ কল্পনাতে বিষ্ণু দ্বিভুজ, চতুর্ভুজ ও অষ্টভুজ এই তিন ধরনের কল্পনার বর্ণনা 'বৃহৎ সংহিতা'তে পাওয়া যায়। নড়েঙ্গা গ্রামে প্রাপ্ত মূর্তিটি চতুর্ভুজ। মূর্তিটি সম্ভবত একাদশ-দ্বাদশ শতকে নির্মিত। মূর্তিটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য মূর্তির পদতলে পাথর কুঁদে সৃষ্ট একটি লেখ। লেখটি সম্পূর্ণ বোঝা যাচ্ছে না। এটা সম্ভবত মূর্তি প্রতিষ্ঠাতা অথবা মূর্তি প্রস্তুতকারক এর নাম হতে পারে। মূর্তিটি খুবই মূল্যবান। কলকাতার আশুতোষ মিউজিয়ামে এই ধরনের একাধিক মূর্তি সংরক্ষিত আছে। এই মূর্তিটিও সংরক্ষণের প্রয়োজন।
শরদিন্দু ঘোষ