এরপর বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। এর মধ্যে বৈকুন্ঠপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেই চারবার হানা দিল। আর একবার গুড়গুড়িয়া ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতে। বন দফতরের অনুমান, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বেরিয়েছিল হয় আজমলমারি এক নম্বর জঙ্গল থেকে। নয়তো আজমলমারি এগার নম্বর জঙ্গল থেকে। তারপর মাগরি বা ঠাকুরাণ নদী পেরিয়ে লোকালয়ের কাছাকাছি আসে। এই রাস্তার দূরত্ব মেরেকেটে ৩০০ মিটার। এই রুটেই বারবার আসছে বাঘ।
advertisement
আরও পড়ুন: সইফের মেরুদণ্ড থেকে মাত্র ২ মিমি দূরে ঢুকেছিল এই ৩ ইঞ্চি ধারালো ছুরি, গল গল করে বেরোচ্ছিল রক্ত!
এলাকাবাসীদের অনুমান নগেনাবাদ এলাকায় একটি নয় দুটি বাঘ রয়েছে। বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বাঘের পায়ের ছাপ জঙ্গলে মিলেছে। জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নদীর ধারের এক দিকে জাল দেওয়া হয়েছে যাতে বাঘ বেরিয়ে অন্য জায়গায় উঠতে পারে। আতঙ্কের কারণ নেই। রাতে নজরদারি চলবে।”
কেন বার বার আসছে বাঘ? বন দফতরে এক আধিকারিক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “ঘন জঙ্গল থেকে লোকালয় সংলগ্ন জঙ্গলের দূরত্ব কম থাকা একটি কারণ। তাছাড়া এখন ঘন কুয়াশা। বাঘ দিকভ্রষ্ট হচ্ছে। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে নদীকে ভেবে নিচ্ছে খাঁড়ি। তারপর চিনতে না পেরে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে সোজাসুজি না গিয়ে দূরে লোকালয়ের দিকে এসে জঙ্গলে উঠছে।”
আরও পড়ুন: ট্রেনে যাচ্ছিলেন ৫৭০১১৪ যাত্রী, প্রত্যেকের হল মোটা অঙ্কের জরিমানা! কেন জানেন?
বন দফতরের বক্তব্য, জঙ্গলে বাঘের খাবার কম পড়ছে এ তথ্য ঠিক নয়। ওরা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে খাঁড়ির পথে ঢুকছে। জঙ্গলে পেতে রাখা জাল কাটা থাকছে। তাই বাঘের পক্ষে ঢোকা বেরনো সহজ হয়ে যাচ্ছে।
ভুবনেশ্বরী, বৈকুন্ঠপুর, কিশোরীমোহনপুর, নগেনাবাদ, গঙ্গার ঘাট এলাকায় অধিকাংশ জায়গাতেই জাল কাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কাঁকড়া ধরতে গিয়ে তা কেটে দিচ্ছেন মৎস্যজীবীদের একাংশ। বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “একই রুটে চলে আসার প্রাথমিক কারণ মনে হচ্ছে, আজমলমারি এক, তিন, চার, ১১, ১২ নম্বর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে লোকালয়ের কাছে চলে আসছে। সেখানে চিতুরির মুখ, চা পাতার ঘাট, লিথুনাইয়ার ঘাটের দিকে থাকা লোকালয়ের কাছে জঙ্গল নেই।
অন্যদিকে, যে লোকালয় সংলগ্ন জঙ্গলে বাঘ ঘাঁটি গাড়ছে সেখানে প্রচুর বন্যপ্রাণী। বন শুয়োর, বন বিড়ালের দেখা মেলে। এখানে খাবার পাওয়ার পেয়ে যায় বাঘ। পাশাপাশি, লোকালয় সংলগ্ন জঙ্গলের কাছে মরা গৃহপালিত পশু ফেলেন গ্রামবাসীরা। সেগুলির টানেও চলে আসে। তারপর সহজে খাবার পেয়ে যাওয়ায় একবার এই জঙ্গলে এসে পড়লে নড়তে চায় না।”
এবারও আজমলমারি ১১ নম্বর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে মাগরি নদী পার হয়েছে বাঘ। গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে পরপর দু’বার বাঘ আসায় আতঙ্ক নেমেছে। গৌরাঙ্গ দাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের দেখা অনেকেই পেয়েছেন। আমাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। রাস্তায় বেরতে ভয় হচ্ছে। লাকায় নেই কোন আলোর ফলে রাতে বাইরে বেরোতে ভয় করে আমাদের। সন্ধ্যা নামলেই বাড়ির দরজা জানলা, বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আমাদের ছেলেদের পড়াশোনা কার্যত বন্ধ হতে বসেছে।”
রায়দিঘি রেঞ্জে সতেরোটি বাঘের দেখা মিলেছিল। তার মধ্যে বেশির ভাগেরই বসবাস ওই জঙ্গলগুলিতে। কারণ যাই হোক, যখন তখন বাঘ ঢুকে পড়ার আতঙ্ক গ্রামবাসীদের কোনও ভাবেই দূর হচ্ছে না। বন দফতরের আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সুমন সাহা