ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে হত নীলের চাষ। ব্রিটিশরা এক প্রকার জোর করে করেই নীলের চাষ করাতেন স্থানীয়দের। সুবর্ণরেখা নদী তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত প্রাচীন নীলকুঠিগুলি তারই নিদর্শন।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে তুমুল ঝড়-বৃষ্টি, তোলপাড় হবে কলকাতা-সহ ৮ জেলায়! জারি বাজের সতর্কতা, আবহাওয়ার বড় খবর
advertisement
তখনকার দিনে বাংলা (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ ) যা ছিল নীল চাষের উপযুক্ত জায়গা নীলকুঠিগুলি সাধারণত নদী বা বাজারের কাছাকাছি তৈরি করা হত। যা পণ্য পরিবহণে সুবিধা করত। নীলকুঠিগুলি শুধু যে বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল তা নয়, যে সব চাষিরা নীল চাষ করত না তাদের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন করা হত এই জায়গায়। নীলকুঠিগুলি ছিল ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
যা সেই সময়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেয়। যেখানে নীল প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিভিন্ন কক্ষ, গুদামঘর ও কর্মকর্তাদের থাকার জায়গাও থাকত। গোপীবল্লভপুরেও রয়েছে সে সব কক্ষ তবে অক্ষত অবস্থায় নেই, কিছুটা মাটির নীচে চাপা। রানটুয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সন্টু বারিক জানান, ‘আগে এখানে ব্রিটিশরা থাকত এবং এখান থেকেই নীল চাষ করাত, এবং সেগুলিকে অন্য জায়গায় বিক্রি করত।’
গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের সুবর্ণরেখা নদী তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নীল চাষ করতে উৎসাহিত করলে সাধারণ মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করতেন। সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস গবেষক লখিন্দর পালুই জানান, ‘এখানকার মানুষ কীর্তনের মধ্য দিয়ে নীল চাষ প্রত্যাখ্যান করার বার্তা ছড়াত, নীলের বীজগুলোকে ভেজে দিলে তাতে আর নীলের গাছ হত না। তাই কীর্তন গানের সুরে বলা হত নীল ভাজোরে নীল ভাজোরে।’
বর্তমানে গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের সুবর্ণরেখা নদী তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে পর্যটন ক্ষেত্র। এই নীলকুঠি থেকেই এই জায়গার নাম হয়েছে কুঠিঘাট। সকাল সন্ধ্যা পর্যটকেরা এখানে ভিড় জমান প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। মূলত দূর্গাপুজোর পর থেকেই এই অঞ্চলে ভিড় হয়। শীতের পর্যটকদের মরসুমে পিকনিক করার জন্য আদর্শ জায়গা এটি।
তন্ময় নন্দী