তারপরই সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন ২০১৯ এ বিজেপির দেওয়া টিকিটে ব্যারাকপুর লোকসভা থেকে জয়ী অর্জুন সিং। পরবর্তীতে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। তবে সেই সময় তাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আগামী লোকসভায় প্রার্থী করার। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, পার্থ ভৌমিককে লোকসভা কেন্দ্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার টিকিট দেওয়াতেই তৃণমূলের শীর্ষস্থরের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন এই সাংসদ।
advertisement
তবে কথা দিয়েও ব্যারাকপুরে অর্জুন সিংকে কেন টিকিট দেওয়া হল না তৃণমূলের তরফে! তাহলে রহস্যটা কোথায়! ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাধারণ মানুষজন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর আসনটি ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। সেবারও কালীঘাটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের পর তালিকায় নাম না দেখে তৎকালীন ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং ছুটলেন দিল্লি। রাতারাতি জার্সি বদলে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হয়।
আরও পড়ুন: ২০০৪-এর সিনেমা, ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে ভাইরাল! কী ঘটল হুগলিতে?
২০১৯ এর ব্যারাকপুর লোকসভা আসনের ফল নিয়ে তৃণমূল যুব দায়িত্ব থাকা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, ২ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয় পাবে তৃণমূল। গণনা শেষে দেখা যায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি তে যাওয়া অর্জুন সিংয়ের কাছে পরাজিত হন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। এরপর সাংসদ হিসেবে বেশ কিছু সময় বিজেপিতে কাটালেও, পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই গেরুয়া শিবির থেকে ফের বছর দেড়েক এক আগে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসেন অর্জুন সিং।
আরও পড়ুন: বলুন তো, ভারতের সবচেয়ে বড় রেল স্টেশন কোনটি? নামটা শুনেই গর্ব হবে, কিন্তু উত্তরটা জানেন কি?
কিন্তু, বাবা আসলেও অর্জুন পুত্র ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিং কিন্তু রয়ে গেছেন বিজেপিতেই। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে অর্জুন সিং জানান, যাঁর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারেও কথা দিয়েছিলেন। তবে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ব্যারাকপুর লোকসভার অধীনে থাকা বিধানসভাগুলোর বেশিরভাগ তৃণমূল বিধায়কই প্রকাশ্যে অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করে সুর চড়িয়েছেন। এমনকী তাঁকে গ্রেফতারের দাবিও তোলা হয়েছিল।
এমনকি তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেও ছাড়েননি। জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এর সঙ্গে অর্জুন সিং এর বিরোধ প্রকাশ্যে ব্যারাকপুরের সর্বস্তরের মানুষের জানা। নিত্যদিন ধরে চলা এই গোষ্ঠীকোন্দল থামাতে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বদের তরফে কোন সক্রিয়তা দেখা যায়নি বলেও মত।তবে এক্ষুনি বিজেপি বা অন্য কোন দলে যাচ্ছেন না ব্যারাকপুরের তৃণমূলের ডাক সাইজের এই নেতা অর্জুন সিং বলেও জানান। এমনকি বর্তমানে যে প্রার্থী হিসেবে পার্থ ভৌমিকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেই পার্থ ভৌমিকের সঙ্গেও সাপে নেউলের সম্পর্ক অর্জনের। অর্জুন সিং যাতে প্রার্থী না হতে পারেন তার জন্য গণস্বাক্ষরও জমা দিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।
কিন্তু এত কিছুর পরও দমতে নারাজ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এই দুধে রাজনীতিবিদ। আর এর মাঝেই চাঞ্চল্যকর দাবি সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার দাবি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে যে দুটি ভোট পেয়েছিলেন তার মধ্যে একটি অর্জুন সিংহের ছিল। এরপরই গতকালের আবহে ফের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠে আসলেও এদিন সকালেই প্রকাশ্যে তিনি জানান বিজেপিতে যোগদানের কোনও ভাবনাচিন্তা আপাতত নেই, তিনি তৃণমূলে থেকেই তার বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগ এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। তবে এখন নির্বাচনের আবহে দলের তরফ থেকে নতুন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কিনা সেদিকেই তাকিয়ে ব্যারাকপুর লোকসভা এলাকার তৃণমূল কর্মী সমর্থক সহ অর্জুন অনুগামীরা।
—— Rudra Nrayan Roy