দরিদ্র চাষিপরিবারের মেয়ে বাসন্তী মাহাতো। পুরুলিয়ার বরাবাজারের রানসি গ্রামের তার জন্ম। পরিবারে রয়েছে মা লক্ষ্মীরাণী, বাবা শান্তিরাম ও ভাই। বড় দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। চাষবাসের উপর নির্ভর করেই তাদের সংসার চলে। অভাব অনটনে মধ্যে দিয়ে তার বড় হয়ে ওঠা। ছোট থেকে খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব ছিল না তার পক্ষে। ফলে নিজের সেই ইচ্ছাকে মনের মধ্যে দমিয়ে রেখে দিয়েছিল সে। কিন্তু, জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল ২০১৮ সালে। জেলা পুলিশের উদ্যোগে ও বরাবাজার থানার পরিচালনায় ‘লক্ষ্য’ নামের তীরন্দাজি অ্যাকাডেমি খোলা হয়। স্থানীয় যুবক যুবতীদের বিনা খরচে তীরন্দাজি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেখানে। সেই সময় বছরের ১৩-র কিশোরী বাসন্তী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। সেই সময় সে ভর্তি হয় ওই প্রশিক্ষণে। প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে আসত সে। নিজের একাগ্রতা আর চেষ্টায় একের পর এক লক্ষ্যভেদ করে সে। জেলা, রাজ্য স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিয়ে এসেছে একের পর এক সাফল্য। তার ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য পদক।
advertisement
এরপরই বাসন্তীর প্রতিভার উপর নজরে পড়ে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার। ২০১৯ সালে সাই-এর সল্টলেক ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণের সুযোগ পায় বাসন্তী। আর তারপরে তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। কলকাতারই একটি বেসরকারি কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছে। সেইসঙ্গে চলছে প্রশিক্ষণও। গত বছর ১৮-টি দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে দলগতভাবে তীরন্দাজিতে ব্রোঞ্জ পদক জেতে বাসন্তী। ওই বছরই চীনে আয়োজিত এশিয়ান ইউথ আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় দু’টি রুপোর পদকও জয় করে সে। এবার লক্ষ্য ব্যাঙ্ককে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় সোনা জয়। তবে, ব্যাঙ্ককে যাওয়ার আগে উত্তরাখণ্ডে আয়োজিত ৩৮-তম ন্যাশনাল গেমসেও অংশগ্রহণ করছে বাসন্তী।
এ বিষয়ে বাসন্তী মাহাতো বলেন, তিনি সমস্ত দিক থেকেই দেশের নাম উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছেন। তার বিশ্বাস তিনি পুরুলিয়ার নাম সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারবেন।বাসন্তীর সাফল্যে গর্বিত তার মা বাবা। গর্বিত বরাবাজার ও পুরুলিয়া জেলা পুলিশও। ভবিষ্যতে বাসন্তী অলিম্পিকে খেলে দেশের নাম উজ্জ্বল তারই অপেক্ষায় গোটা জঙ্গলমহল। বাসন্তী মাহাতোর আগামী দিন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠুক এমনটাই কামনা করছেন সকলে।
Sharmistha Banerjee