পশ্চিমবঙ্গের ফরাক্কা এলাকায় জনা ৩৫ চাষির বিকল্প চাষের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ লাভ করেছেন। জানা গিয়েছে, তাঁরা সকলেই স্ট্রবেরি চাষ করেছিলেন (Strawberry production at Farakka)। পশ্চিমবঙ্গের জমিতে এই ফল চাষের সূচনা করেছে অম্বুজা সিমেন্ট ফাউন্ডেশন। আসলে সংস্থার ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপসিবিলিটি’ (Corporate Social Responsibility) বিভাগের তরফ থেকে ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কের (IndusInd Bank) সহযোগিতায় এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে সূচনা হয়েছিল। আর তার সাফল্যে বর্তমানে দারুন উৎসাহিত সংস্থা।
advertisement
অম্বুজা সিমেন্ট ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে স্ট্রবেরি চাষে কৃষকদের সাহায্য করা হয়েছে নানা দিক থেকে। এই বিকল্প চাষের জন্য কৃষি জমি ও অন্য পরিকাঠামো নির্মাণে সহায়তার পাশাপাশি কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য কৃষকের আয় বৃদ্ধি, এমনই জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
পুরো বিষয়টিতে বিপণনও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। তাই অম্বুজা ফাউন্ডেশন একটি বাজার সমীক্ষা করে তবেই প্রকল্পটি শুরু করেছিল। সে জন্য প্রথমেই তারা স্থানীয় খুচরো ফলের দোকান এবং বাজার পরিদর্শন করেছিল। তার পর সংলগ্ন এলাকার শপিং মলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। উৎপাদিত পণ্যের বাজার ধরতে নানা ধরনের আলোচনা চালান কর্তৃপক্ষ।
তবে সমস্যা একটু রয়েছে। স্ট্রবেরিকে একটি পচনশীল পণ্য বিবেচনা করা হয়। তাই খোঁজ চলছে আরও সহনীয় প্রজাতির, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং উন্নত ফলন দিতে পারে। দেখা গিয়েছে, এলাকার কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। এক বছর আগে, কিছু কৃষককে স্ট্রবেরি চাষ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়। এর পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী ২-৩ মাসের মধ্যে খানিকটা অর্থ উপার্জন করতে সহায়তা করা। কিন্তু যে ফলাফল এসেছে তাতে অম্বুজা দ্বিগুণ উৎসাহিত। তারা স্ট্রবেরি উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৩৫ জন কৃষকের জন্য ৪০ হাজার গাছের চারা দেওয়া হয়েছিল। গত বছর তা দ্বিগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন-চেনা কেউ আছেন না নিজেরই নামের শুরু 'K' দিয়ে? এমন ব্যক্তিরা ঠিক কেমন চরিত্রের হন?
অম্বুজা সিমেন্ট লিমিটেড (Ambuja Cements Ltd) এবং ইন্ডিয়া হলসিম-এর (India Holcim) CEO নীরজ আখৌরি (Neeraj Akhoury) বলেন, ‘আমরা দেখেছি গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রয়োজন অনেক বেশি। আর সেটা আরও অনেক বেশি জরুরি প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষকদের জন্য। কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমের শেষ হতে পারে দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর দারিদ্র। আমাদের লক্ষ্য ছিল কৃষকদের সেচ-সহ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করতে সাহায্য করা।’
জানা গিয়েছে, স্থানীয় লক্ষ্মীপুর গ্রামে সেচের সুব্যবস্থা ছিল। সেখানেই প্রথম স্ট্রবেরি চাষের ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় দু’একর জমিতে চাষ শুরু করেন ছ’জন কৃষক। তার আগে, ওই এই ফল চাষের জন্য কী ভাবে মাটি তৈরি করতে হবে কৃষকদের তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি একরে প্রায় ১২ হাজার চারা রোপন করেছিলেন কৃষকেরা। নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপন, তরল সার প্রয়োগ, ভিটামিন স্প্রে করা এবং পলিথিন মালচিং (Polyethene Mulching) প্রভৃতি বিষয়ে পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষ নজর রাখা হয়েছিল।
এক মাস পরিচর্যার পর স্ট্রবেরি গাছে ফল ধরতে শুরু করে। কৃষকের আনন্দ তখন দেখার মতো। এক সপ্তাহের মধ্যেই স্ট্রবেরি উৎপাদন প্রায় এক কুইন্টালে পৌঁছে যায়।
প্রাথমিক ভাবে কৃষকেরা প্রতি কিলোগ্রামে ৩৫০ টাকা করে রোজগার করেছিলেন। পরে কৃষকেরা নিজেদের উৎপাদিত ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেন। মালদহ এবং রায়গঞ্জের বাজারেও নিয়মিত বিক্রি হতে শুরু করে স্ট্রবেরি। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে উৎপাদন প্রতিদিন ৫০ কিলোগ্রামে দাঁড়ায়।
বর্তমানে এলাকার চাষিরা গড়ে ০.৩৩ একর জমি থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোগ্রাম স্ট্রবেরি উৎপাদন করতে পারছেন। ফলে প্রায় ১ লক্ষ টাকার লাভ হচ্ছে তাদের। মোট ১৫৮ কুইন্টাল ফল উৎপাদন হলে লাভের অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৯.৬২ লক্ষ টাকায়।
অম্বুজা সিমেন্ট ফাউন্ডেশন আশ্বস্ত করেছে, এই উন্নতির রূপরেখা অক্ষুণ্ণ থাকবে, আসন্ন মরশুমে চাষিদের কাছে প্রায় ১ লক্ষ গাছের চারা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে তারা।