নদিয়ার শান্তিপুর সুত্রাগড়ের তামলিপাড়ার বাসিন্দা ২৭ বছরের সামন্ত হাজরা প্রায় ১২ বছর আগে বাবাকে হারিয়েছেন। অসুস্থ মা এবং ভাইকে নিয়ে সংসারের যাবতীয় দায়ভার একাই বহন করে চলেছেন তিনি। বাড়িতে রয়েছে দু’টি পাওয়ার লুম। সেখান থেকে সংসারের কিছুটা আয় হয়। তবে ছোটবেলা থেকেই শিল্পের প্রতি গভীর টান তাঁকে নিয়ে এসেছে এক অনন্য জগতে। শখের বশে শুরু হলেও এখন মিনিয়েচার মূর্তি তৈরিই তাঁর পেশা এবং পরিচয়ের কেন্দ্রবিন্দু।
advertisement
আরও পড়ুনঃ অপমানের জবাব দিতে পুজো শুরু! মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে হয় উমার আরাধনা, ৯৯ বছর ধরে অটুট ‘এই’ পুজোর ঐতিহ্য
সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয় এই মূর্তিগুলি। কোনও ছাঁচ ব্যবহার করেন না সামন্ত। কেবলমাত্র সলিড মাটির উপর নির্ভর করে সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলেন তিনি। প্রতিটি মূর্তি তৈরিতে অনেকটা সময় লাগে। কারণ সম্পূর্ণ মূর্তি ধৈর্য ধরে নিখুঁতভাবে গড়ে তুলতে হয়। সেই কারণে দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি হলেও, বড় মূর্তির তুলনায় তা অনেকটাই কম বলে জানিয়েছেন শিল্পী। এই বছর তাঁর হাতে তৈরি দুর্গা মূর্তি যাচ্ছে চন্দননগর। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে সেই সূক্ষ্ম কাজ।
সামন্তের তৈরি মূর্তির চাহিদা শুধুমাত্র রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইতিমধ্যেই তাঁর তৈরি একাধিক মূর্তি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। কলকাতা, দুর্গাপুর থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তে তাঁর শিল্পকর্ম সাদরে গ্রহণ করেছে মানুষ। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে তাঁর হাতের কাজ। সম্প্রতি একটি লক্ষ্মী মূর্তি আমেরিকায় পৌঁছেছে। এই বছরের দুর্গাপুজোয় দুবাইয়ে পূজিত হবে সামন্তের হাতে তৈরি এক ‘দুর্গা পরিবার’। সেই মূর্তিতে সন্তান সহ মা দুর্গা রয়েছেন।
অর্ডার অনুযায়ী যেকোনও দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করে দেন সামন্ত। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সূক্ষ্ম কাজ করে তৈরি হয় প্রতিটি শিল্পকর্ম। পাশাপাশি সঠিক ঠিকানায় পাঠানোর দায়িত্বও নেন তিনি নিজেই। তবে পরিবহণের জন্য আলাদা চার্জ ধার্য থাকে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
সংসারের চাপ, আর্থিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও সামন্ত হাজরার একাগ্রতা ও নিষ্ঠা তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। মাটির ছোট ছোট টুকরোয় গড়ে ওঠা দেবদেবীর রূপ শুধু শিল্প নয়, এক নিবিড় সাধনা। শান্তিপুরের এই তরুণ শিল্পী আজ প্রমাণ করেছেন সীমিত সম্পদেও অধ্যবসায় ও প্রতিভার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে পৌঁছে দেওয়া যায়।