আরও পড়ুনঃ কুমোরটুলির প্রতিচ্ছবি হাওড়ার এই গ্রাম! প্রতিমার বৈচিত্র্য অবাক করবে
কোনও বলি বা কারণ সুধা ব্যবহার করা হয় না পুজোতে। মাতৃমূর্তি বিশাল আকৃতি হওয়ার প্রতিবছর কালীপুজোর দিন মূল মন্দিরের সম্মুখে মূর্তি স্থাপন করে পুজো করা হয়। কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে মাতৃ সাধক তথা দক্ষিণাকালী মাতৃমূর্তির রূপকার মাতৃ সাধক আগমবাগীশ সর্বপ্রথম দক্ষিণা কালীমায়ের এই পুজো শুরু করেছিলেন। জানা যায়, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, যিনি ছিলেন সপ্তদশ শতকের এক উচ্চস্তরের তন্ত্রসাধক। তিনি নদিয়ার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭০ টির মতো বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে নির্যাস সংগ্রহ করে “বৃহৎ তন্ত্রসার” গ্রন্থ রচনা করেন। মাতৃ সাধনা করার সময় কোনও একদিন তিনি মায়ের সাকার রূপ দর্শন পেতে মায়ের কাছে আকুতি মিনতি করতে থাকেন এবং সেইরূপ নির্মাণ করে পূজার্চনা করার আবেদন জানান মায়ের কাছে। এরপর তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম যেই নারীমূর্তিকে তিনি সম্মুখে দেখতে পাবেন সেটি হবে মায়ের আসল আকৃতি বা রুপ এবং সেই রূপে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে তিনি মাকে পূজা করতে পারেন।
advertisement
আদেশ মাফিক তিনি ভোররাতে গঙ্গা স্নান করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং পথে দেখতে পান কৃষ্ণ কালা এক গোয়ালিনী মহিলা এক মনে গাছের গায়ে ঘুঁটে দিচ্ছেন, বাঁ হাতে গোবরের তাল, ডান হাত তুলে ঘুঁটে দিচ্ছেন, পরণের কাপড় হাঁটুর ওপরে, কুঞ্চিত কেশরাশি কোমর ছাপিয়ে হাঁটু ছুঁই ছুঁই, কৃষ্ণবর্ণা, কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে সিঁদুর লেপ্টে গেছে, এ হেন অবস্থায় পরপুরুষ কৃষ্ণানন্দকে দেখেই বধূ জিভ কেটে ফেলে, তার ডান পা অগ্রে প্রসারিত। এই চিত্রই মানসপটে এঁকে গঙ্গামাটি দিয়ে মূর্তির রূপ দেন কৃষ্ণানন্দ। এই মূর্তিই পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে যেসব দক্ষিণাকালী আমরা দেখি তারই আদি ও প্রাচীন প্রথম রূপ এই কৃষ্ণানন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দেবীর মূর্তি।
কৃষ্ণানন্দ একই দিনে মূর্তি গড়ে পুজো করতেন ও পরের দিন তা ভোরে বিসর্জন দিতেন। আগমসিদ্ধ কৃষ্ণানন্দের মূর্তিই “মাতা আগমেশ্বরী” নামে খ্যাত। সেই রীতি মেনে একাদশীর দিন থেকে মাতৃমূর্তি তৈরি হওয়ার কাজ শুরু হয় এবং অমাবস্যাতে মায়ের চক্ষুদান করা হয় বলে জানা যায়। পুজোঅন্তে একাধিক বাহক দ্বারা মাকে কাঁধে বহন করে স্থানীয় পীরতলা খালে বিসর্জন দেয়া হয়। তবে এটি একটি পারিবারিক পূজা। কালীপুজোর দিন সারাদিন ব্যাপী নবদ্বীপের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হন পূজামণ্ডপে।
Mainak Debnath