আরও পড়ুনঃ জয়েন্টের র্যাঙ্কে কারচুপি! মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে এসে গ্রেফতার ছাত্রী
মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন কোন্নগরের নন্দিনী ঘোষ। আগে ট্রেনেই যেতেন করোনার সময় লকডাউনে ট্রেন বন্ধ থাকায় গাড়ি কেনেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেই গাড়ি করেই যাতায়াত করতেন। কখনও একা কখনও দু-একজন সহকর্মী তাঁর সঙ্গে থাকতেন। গতকালও মেদিনীপুর থেকে কোন্নগর ফিরছিলেন এক সহকর্মীর সঙ্গে। উলুবেড়িয়া ১৬ নং জাতীয় সড়কে কুলগাছিয়ার কাছে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় চালক-সহ তিন জনের।
advertisement
নন্দিনীর বাবা সুদীপ ঘোষ প্রাক্তন আইএএস অফিসার। তিনি জানান, নন্দিনী প্রতিদিন সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বের হত। রাত আটটার মধ্যে বাড়ি ফিরত। গতকাল বিকাল ৫ টায় মেদিনীপুর থেকে বেরিয়ে মা স্বাগতা ঘোষকে জানায়। রাত আটটা বেজে গেলেও বাড়ি না ফেরায় দুশ্চিন্তা শুরু হয়। সুদীপবাবু তাঁর পরিচিত লালবাজারে কয়েকজন অফিসারকে ফোন করেন। নন্দিনী, নিশা এবং বিশ্বজিৎ কারওর নম্বরে ফোন করেই যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে উলুবেড়িয়া থানার সেকেন্ড অফিসার নন্দিনীর ফোন ধরে বলে দুর্ঘটনার কথা। হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর খবর পান।
নন্দিনী ২০১৮ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ইন্সটিটিউট থেকে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। দশ বছর ধরে অধ্যাপনা করছেন। প্রথমে শ্রীরামপুর কলেজ পরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। সুদীপবাবু বলেন, মেয়ে মাকে ছাড়া থাকত না। গতকাল সময়ে যখন ফেরেনি তখনই চিন্তা শুরু হয়। ওরা ফিরছিল উল্টোদিক থেকে। উল্টদিক থেকে একটি গাড়ি ওদের গাড়িকে ধাক্কা মারে। কীভাবে গাড়ি চালায়। মেয়ে আর ফিরবে না ওর মা কী করে থাকবে।’
গাড়ির চালক বিশ্বজিৎ দাস তিনিও হুগলির কোন্নগরের বাসিন্দা। মাত্র ৪ মাস হয়েছিল তাঁর বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে মা ও অন্তঃসত্ত্বাস্ত্রীকে রেখে রোজগারের তাগিদে প্রতিদিনের মতন গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। মেদিনীপুরে পৌঁছে বাড়ির লোককে ফোন করে জানান তিনি রাতের সময় মতন ফিরে যাবেন। তবে বাড়ি ফেরা আর হল না। ফেরার পথেই ঘটলো মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। চোখের জলে ভাসাচ্ছে বিশ্বজিতের পরিবার। সদ্যবিবাহিত স্ত্রী ও মায়ের কান্না যেন থামেই না। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন বিশ্বজিৎ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিশ্বজিৎ গাড়ি চালানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বিশ্বজিৎ-এর স্ত্রী রত্না দাস জানান, ‘সকালবেলা ছটার সময় তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন। মেদিনীপুর পৌঁছে বাড়ির লোককে ফোন করে জানান তিনি পৌঁছেছেন। রাতে বাড়ি ফেরার আগেও বাড়ির লোককে ফোন করেছিলেন। তারপরে মাঝ রাতে আসে সেই দুর্ঘটনার খবর। যার কারনে তাঁদের ছেলের মৃত্যু হল তার উপযুক্ত শাস্তি চাইছে পরিবার।’
রাহী হালদার