এরকম সময়েই পড়তে চেয়ে স্বাধীনতার নতুন মানে খুঁজছে কুলতলির গোপালগঞ্জ গ্রামের ওই মেয়ে। সদ্য আঠারো পেরনো ওই মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলেছে বাবা-মা। বিয়ের দিনক্ষণও প্রায় পাকা। কিন্তু মেয়ে চায় কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে। এখনই বিয়ে করার ইচ্ছা নেই তার। বিয়ের প্রতিবাদ করে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সে। তাতে বেধড়ক মারধরও জোটে। তবে দমে যায়নি মেয়েটি। স্কুলের মিটিংয়ে সে শুনেছিল, বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য জোর করলে কী করতে হবে। সেই মত এলাকার আশা কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়েটি।
advertisement
এলাকার কিশোর কিশোরীদের মানসিক, শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরমার্শ দেওয়ার জন্য প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালেই তৈরি হয়েছে অণ্বেষা ক্লিনিক। মেয়েটিকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে কুলতলি গ্রামীণ হাসপাতালের সেই ক্লিনিকেই নিয়ে আসেন তার গ্রামের আশা কর্মী। অণ্বেষা ক্লিনিকের কাউন্সেলার সুপর্ণা কন্ঠের কাছে সব খুলে বলে মেয়েটি। কাঁদতে কাঁদতে সে বলে, ‘আমি পড়তে চাই। বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে। কিছু একটা করুন।’ স্থানীয় সূত্রে খবর, মেয়েটির বাবা সিভিক ভলান্টিয়ার। তার পরেও বিয়ে দিতে চেয়ে অত্যাচার চালাচ্ছে মেয়ের উপর। সুপর্ণা বলেন, ‘কোনও গৃহশিক্ষক ছাড়া নিজে পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে মেয়েটি। এখন কলেজে পড়তে চাইছে। অথচ বাড়ির লোক বিয়ে দিতে চায়। ওর উপর ভয়ানক অত্যাচার করা হচ্ছে। ওর বাবা সিভিক ভলান্টিয়ার। তারপরেও এই অবস্থা। আপাতত ওকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি। বাবা-মাকে বোঝানোর চেষ্টা হবে। তবে এসবের জেরে মারধরের পরিমাণ বেড়ে না যায়, সেই আশঙ্কা রয়েছে।
মেয়েটিকে উদ্ধার করা ওই আশা কর্মীর কথায়, ‘ও এখনই বিয়ে করতে চায় না। বাড়িতে বারবার সেই কথা বলেছে। এমনকী বাড়ির লোককে বলেছে, পাত্র ঠিক করে রাখতে, পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করবে। কিন্তু বাড়ির লোক ওর কথা শোনেনি। মারধর করেছে। বাড়ির লোক বলছে, ওর বয়সী পাড়ার সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, ওর আর পরে বিয়ে হবে না। কন্যাশ্রীর টাকা পেয়েছে। মেয়েটা। সেই টাকায় পড়তে চায় ও। বাড়ির লোক তাও চায় না।’ প্রশাসন সূত্রের খবর, আঠারো বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে আইন অনুযায়ী তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাড়ির লোকের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মেয়েটির বয়স আঠারো পেরিয়ে যাওয়ায়, আইন অনুযায়ী বিয়ে আটকানো যাবে না। বারুইপুরের মহকুমাশাসক চিত্রদীপ সেন বলেন, ‘এরকম ক্ষেত্রে আইনে কিছু করার নেই। তবে বাড়ির লোককে বুঝিয়ে বিষয়টি কীভাবে মেটানো যায়, দেখা হবে। ‘