দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির জামতলায় বিআর আম্বেদকর কলেজে দুয়ারে ডাক্তারের শিবির বসে। সেখানে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে দু'দিন ধরে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা করেন। কুলতলির ১৬০০ মানুষ এই শিবিরে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর সুযোগ পান।
যে এলাকায় এই শিবির হয় সেখান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভুবনেশ্বরী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানে গিয়ে কোনও চিকিৎসকেরই দেখা পাওয়া গেল না। যদিও রোগীর সংখ্যা কম নয়। তাঁরা ভিড় করে বসে আছেন, একজন নার্স সেই রোগীদের ওষুধ দিচ্ছেন।
advertisement
আরও পড়ুন: ৬ দিনে ৬ লক্ষ সুন্দরবনবাসীর ভিড় দুয়ারে সরকারে
অবশ্য ভুবনেশ্বরী প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই বেহাল অবস্থা আজকের নয় বলে জানিয়েছেন রোগীরা। দীর্ঘদিন ধরেই এই অবস্থা চলছে। তাঁরা বলেন, সপ্তাহে দু'দিন একজন চিকিৎসক বসেন। বাকি দিনগুলিতে একজন ফার্মাসিস্ট থাকেন। তিনিই ওষুধ দেন। কোনও কোনও সপ্তাহে আবার চিকিৎসকের দেখাও পাওয়া যায় না।
এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থেকে চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। নেই আধুনিক যন্ত্রপাতিও। ফলে গুরুতর কোনও সমস্যা হলে ৩০ কিলোমিটার দূরের গ্রামীণ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয় রোগীকে। রোগীর পরিবারকেই গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যেতে হয়। হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবে গ্রামের মানুষ হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে ছুটে যেতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুবনেশ্বরী ছাড়াও কুলতলি ব্লকে কৈখালি এবং কাঁটামারিতে আরও দু'টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। অভিযোগ, সেখানেও নিয়মিত চিকিৎসক থাকেন না। কুলতলি গ্রামীণ হাসপাতাল সূত্রে খবর, একজন চিকিৎসকই তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু'দিন করে পরিষেবা দেন।
এই অবস্থায় স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, দুয়ারে ডাক্তার শিবির না করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যাতে নিয়মিত চিকিৎসক পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করা হোক। তাঁদের মতে, দুয়ারে ডাক্তারের শিবির দু'দিনের। কিন্তু একজন নিয়মিত চিকিৎসক পাওয়া গেলে তিনি সারা বছর পরিষেবা দিতে পারবেন। বাসন্তী পাল নামে এক রোগী বলেন, শুনেছি জামতলায় দুয়ারে ডাক্তার শিবির হচ্ছে। কিন্তু তাতে আমাদের কী লাভ! গাড়ি ভাড়া করে ৩০ কিলোমিটার গিয়ে ডাক্তার দেখানো সম্ভব নয়। তার থেকে এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসক থাকলে ভাল হত।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মুক্তিসাধন মাইতি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা উচ্চতর পড়াশোনার বা অন্য কারণে ছুটিতে যান। সেই সময় একটা শূন্যস্থান তৈরি হয়। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নতিতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
সুমন সাহা