ফলতার এই সরকার বাড়ির খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার, গলি থেকে রাজপথ সর্বত্রই লুকিয়ে আছে অজানা অতীত। সরকার বাড়িতে প্রথমে ঘটা করে কালীপুজো হত। পরে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়। সেই পরম্পরা মেনে সরকার বাড়িতে আজও নাট মন্দিরে দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো প্রতিবছর পরপর পালন করা হয়।
ষষ্ঠদশ শতকের শেষে সুলতানি ও মোঘল সাম্রাজ্যের সন্ধিক্ষণে গড়ে উঠেছিল এই সরকারবাড়ির ইতিহাস। তখন বাংলার সুলতান ছিলেন দাউদ খান কররানী। এনাকে যুদ্ধে পরাজিত করেন মানসিংহ। এই মানসিংহ দক্ষিণ চবিবশ পরগনা অঞ্চলের জমিদারী প্রদান করেন বাওয়ালী রাজবাড়ির মন্ডল পরিবারকে।এই বাওয়ালী মন্ডল পরিবারের সঙ্গে ফলতার সরকারবাড়ির সম্পর্ক ছিল মাতুলালয়সম। সেসময় সরকারবাড়ির শোভারাম সরকার দাদু কে আবদার করে বলেছিলেন যে তিনিও জমিদারি করতে চান। এরপর বীরত্ব প্রকাশ করে তিনি জমিদারি লাভ করেন।এই শোভারাম সব়কারই প্রথম পুজোব় প্রচলন করেন সরকার বাড়িতে। আনুমানিক ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে।
advertisement
প্রথমে কালীপুজো দিয়ে শুরু হয় পুজো, তার কিছুদিন পর হয় এই দুর্গাপুজো। প্রায় ২০০ বছর আগে এই বংশের সুরেন্দ্রনাথ সরকার পুরানো পুজাটিকে বিস্তৃত রূপ দান করেছিলেন।এই পুজো নিয়ে স্থানীয় ইতিহাসবিদ মনীশ চক্রবর্তী জানান এই পুজোর সাথে যুক্ত ঢাকি, মজুর, দেবী প্রতিমা নির্মাণকারী শিল্পী প্রভৃতি পরিবারকে ভূমি দান করা হয়েছিল। কালীঘাট থেকে গঙ্গাজল নিয়ে এসে পূজার সমস্ত কাজে ব্যবহার করা হতো। এই পূজার আট চালাটি আগে শাল কাঠ ও উলু খড় দ্বারা নির্মীত ছিল। পরবর্তীকালে ইঁট দ্বারা নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়।বঙ্গনগরের সরকার পরিবারের এই পুজোর কাঠোমা পুজো করে হয় জন্মাষ্টমীর দিন। আগে দুর্গা প্রতিমা ছিল এক চালা এক কাঠামো। কিন্তু বর্তমানে বিসর্জনের সুবিধার কথা মাথায় রেখে, সপারিষদ দুর্গা প্রতিমাকে তিনটি খন্ডে তৈরি করে জুড়ে দেওয়া হয়। কালের নিয়মে এই পুজোর জৌলুস কিছুটা কমলেও ঐতিহ্য রয়ে গেছে সেই আগের মতই।
নবাব মল্লিক