নিয়ম ও নিষ্ঠা মেনে প্রতিবছর পুজো হয়। এ বছর এই বনেদি বাড়ির পুজো ৩৫৭ বছরে পদার্পণ করল। চম্পাহাটির সাউথ গড়িয়া বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো এলাকায় বিখ্যাত। প্রতি বছর এই পুজোয় বিসর্জনের সময় বন্দুক থেকে দুটি ফাঁকা গুলির আওয়াজ করা হত। মায়ের প্রত্যাবর্তনে আগাম বার্তা পৌঁছে দিতে ছাড়া হত এক বিশেষ ধরনের পাখি। এ ছাড়াও এই পুজোয় তিনদিন ছাগ বলি দেওয়া হত। জমিদার বাড়ির বিসর্জনের প্রতিমা আগে বিসর্জন করা হত, তারপর এলাকার অন্যান্য ঠাকুর বিসর্জন হত।
advertisement
আরও পড়ুনঃ পুজোর মুখে পর পর নিম্নচাপের খাঁড়া, আর কতদিন চলবে বৃষ্টি, জানুন সর্বশেষ পূর্বাভাস
জমিদার পরিবারের তরফে বর্তমান বংশধর ও ট্রাস্টির অছি পরমজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁদের পূর্ব পুরুষ মুঘল সাম্রাজ্যের খাজাঞ্চি হিসাবে কাজ করতেন। তার নাম ছিল রামকিশোর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ১৬৬৫ সালে এই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। তাঁর জমিদারি ছিল জয়নগরের দক্ষিণ বারাসাত এলাকায় আর কাছারি বাড়ি ছিল সাউথ গড়িয়ায়। তিনি এখানে এসে জমিদার বাড়ি তৈরি করেন। তারপর ঠাকুর দালান তৈরি করে দুর্গাপুজো শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তার উত্তরসূরি যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর দায়িত্বভার নেন।
আরও পড়ুনঃ আচমকা বিকট শব্দ! মোটরসাইকেল বিস্ফোরণে হুলুস্থল বোলপুর! তুমুল ভাইরাল ভিডিও
পরমজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর বেশ কিছু নতুনত্ব এনেছিলেন। তার আমলে এই পুজোর ট্রাস্টি গঠন করে। সাউথ গড়িয়া পুলীন বিহারী জয়েন্ট এস্টেট দেবোত্তর ট্রাস্ট। পরিবারের জমিদারী দায়িত্ব বদল হলেও পুজোর নিয়মকানুনের কোনও পরিবর্তন হয়নি। এখনও পঞ্চমীতে মায়ের বোধন হয়। ষষ্ঠীতে বেলতলায় মায়ের অধিবাস ও সপ্তমীতে নব পত্রিকার স্নান দিয়ে শুরু হয় পুজো। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত পুজা প্রাঙ্গন থেকে ভোগ বিতরণ ও দরিদ্র নারায়ণ সেবা হয়। অষ্টমীতে এখনও কুমারী পুজোর চল রয়েছে। নবমীতে আগে ছাগ বলি হতো, কিন্তু বর্তমানে আখ, চালকুমড়া ও কলা বলি হয়। দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।
বর্তমান প্রজন্মের বংশধরেরা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকলেও পুজোর ক'দিন সকলে মিলিত হন সাউথ গড়িয়ার এই বাড়িতে। আশেপাশের বহু মানুষ আসেন সন্ধ্যা আরতি দেখার জন্য। জৌলুস খানিকটা কমলেও আভিজাত্য এখনও নজর কাড়ে।
সুমন সাহা