শিক্ষারত্ন পুরস্কার প্রাপ্ত এই শিক্ষক নিয়ম করে এখনও দুশোর বেশি পড়ুয়াদের ইংরেজি পড়ান। বাসন্তী হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন অমল। মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করার পর থেকেই এলাকার গরীব, দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে তিনি বিনা পয়সায় বাড়িতে পড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন৷ সেই ১৯৮০ সাল থেকেই তাঁর শিক্ষক জীবনের শুরু।
advertisement
তারপর অভাবের সঙ্গে লড়াই করে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। দরিদ্র ছাত্র হিসেবে তিনি বুঝেছিলেন এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সমস্যার কথা। এইসব ছেলেমেয়েদের বেশিরভাগেরই প্রাইভেট টিউশন নেওয়ার ক্ষমতা নেই। পাশাপাশি ইংরেজি বিষয়ে একটা আলাদা রকমের ভয় কাজ করতো এই প্রত্যন্ত এলাকার ছেলে মেয়েদের মধ্যে।
সেই ভয় কাটাতেই স্কুলের পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রীদের মনোবল শক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। স্কুলের বাইরে অমল স্যারের এই ফ্রি-কোচিং ক্লাস যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল আশপাশের আরও কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদের কাছে।এসব তো ছিলই, পাশাপাশি ড্রপ-আউট ছেলেমেয়েদের বাড়ি গিয়ে তাঁদেরকে প্রথমে কোচিং সেন্টারে এনে শিক্ষা সামগ্রী, বইপত্র, ইউনিফর্ম দিয়ে সহযোগিতা করতেন, উৎসাহিত করতেন। পরে তাঁদেরকে ফের স্কুলমুখী করতেন। এইভাবেই প্রথাগত শিক্ষার বাইরে গিয়ে হাজার হাজার দুঃস্থ পড়ুয়াদের অন্যতম ভরসার মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন অমল।
বর্তমানে স্কুলের চাকরি থেকে অবসর নিলেও পঞ্চম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত প্রায় দুশোর বেশি ছাত্রছাত্রীরা তাঁর পঠনকেন্দ্রে পড়তে আসে। বাসন্তীর শিবগঞ্জ জুনিয়র হাইস্কুল, সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যানিকেতন, সেন্টটেরিজা হাইস্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স হাইস্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীরা তো রয়েছে৷ পাশাপাশি অন্যান্য স্কুলের পড়ুয়ারাও আসে তাঁর কাছে ইংরেজির ভিত মজবুত করতে। অমল স্যারের ছত্রছায়ায় থেকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন: রোজ ৫-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কাটছে, এখনও সমাধান অধরা
এঁদের মধ্যে বসুদেব নস্কর নিজেই বাসন্তীর একটি হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক। তিনি বলেন, “একসময় দারিদ্র্য ও পারিবারিক কারণে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। অমল স্যারের সহযোগিতা পেয়েছি৷ তাঁর বাড়িতে এসে তাঁর কাছে পড়াশোনা শিখেছি। এখন উচ্চশিক্ষা লাভ করে নারায়ণতলা রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করছি। স্যারের কাছে আমি চিরঋণী।”
বাসন্তীর বাসিন্দা একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া সুদীপ মন্ডল, নীলিমা সর্দাররা বলেন, “পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারনে আলাদা করে ইংরেজি টিউশনি নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু স্যার আমাদের ফেরাননি। ইংরেজি নিয়ে যে ভয় আমাদের ছিল তা অনেকটাই কেটে গিয়েছে।” অমল বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই থাকতেই ভালবাসি। ওঁদের মধ্যেই বেঁচে থাকতে চাই। অবসর স্কুল থেকে মিলেছে, কিন্তু আমার কাজ এখনও অনেক বাকি। যতদিন পারবো, ততদিন এভাবেই ওঁদের পাশে থাকবো।”
সুমন সাহা