কিন্তু শুধু গঙ্গাসাগর নয়, এই বাংলার আরও অনেক তীর্থক্ষেত্র নিয়েও অপার আকর্ষণ আছে ভক্তদের মধ্যে। এ'বছর গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানে গিয়ে বাংলার অন্যতম পাঁচ তীর্থভূমি দেখার সুযোগ মিললে কেমন হয়? সেই ব্যবস্থাই রয়েছে এবারের গঙ্গাসাগরে। বাংলার পাঁচ পুণ্যতীর্থ, পাঁচ শ্রেষ্ঠ মন্দিরের রেপ্লিকা তৈরি করা হয়েছে সাগরে। জেলার একাধিক শিল্পী এবং আর্ট কলেজের পড়ুয়ারা নির্মাণ করেছেন ওই মন্দিরগুলি। গঙ্গাসাগরে গেলেই দেখা মিলবে কালীঘাট, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর, তারকেশ্বর ও মালদহর জহুরা কালী মন্দিরের।
advertisement
এবারের সাগরমেলায় বাংলার উল্লেখযোগ্য পাঁচটি শক্তিপীঠের মডেল তুলে ধরা হয়েছে। পাঁচ মন্দিরকে একত্রে তুলে ধরা হচ্ছে ‘বাংলার মন্দির’ নামে। মেলা মাঠের চার নম্বর রাস্তার মাঝামাঝি একটি এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছে এই পাঁচ মন্দির। নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৬০ জন শিল্পী দিনরাত এক করে ফুটিয়ে তুলছেন এই অপরূপ শিল্পকর্ম। শিল্পীরা বিভিন্ন আর্ট কলেজের পড়ু্যা বা প্রাক্তনী। মন্দিরগুলিকে আধুনিক আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ত্রিমাত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হবে, পুণ্যার্থীদের মনে হবে আসল মন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছেন। এছাড়া অনলাইনে সরাসরি আসল তীর্থক্ষেত্র থেকে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে।
"বাংলার মন্দির"এই কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেছে দীপঙ্কর দত্ত ও তাঁর দলের শিল্পীরা। দীপঙ্কর দত্ত বলেন, '' দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গঙ্গাসাগর মেলায় পুণ্যার্থীরা ভিড় জমান। বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে আরও ছড়িয়ে দিতে এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। 'বাংলার মন্দির'-এর মাধ্যমে বাংলার পর্যটন শিল্পকে বিশ্বের দরবারে প্রতিস্থাপন করার লক্ষ্য রাজ্যের পর্যটন দফতরের। তিন মাসেরও বেশি সময় লেগেছে বাংলার এই প্রসিদ্ধ পাঁচ মন্দিরের মডেল তৈরি করতে। 'বাংলার মন্দির' তৈরি করতে মোট ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। মেলা শুরুর আগে থেকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বাংলার এই পাঁচ মন্দিরের মডেল। বহু পুণ্যার্থী ইতিমধ্যেই দর্ষণ করেছে বাংলার এই প্রসিদ্ধ পাঁচ মন্দির।''
আলকা চৌধুরী নামে এক পর্যটক বলেন, '' দ্বিতীয় বছর গঙ্গাসাগর মেলায় এসে এত সুন্দর বাংলার পাঁচটি মন্দিরের মডেল দেখতে পাব, ভাবিনি।'' সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, '' গঙ্গাসাগর মেলাকে আন্তর্জাতিক মেলা ঘোষণা করার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গাসাগর মেলায় আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। গঙ্গাসাগরে আগে একটি মাত্র অস্থায়ী হেলিপ্যাড ছিল। সেই একটি হেলিপ্যাডের বদলে এ'বছর স্থায়ী তিনটি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। গঙ্গাসাগরে পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরার জন্য বাংলার প্রসিদ্ধ পাঁচটি মন্দিরকে এ'বছর গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।''
১০ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত হবে এই বছরের গঙ্গাসাগর মেলা। পুণ্যস্নান শুরু হচ্ছে ১৪ তারিখ ৬.৫৩ মিনিটে। পুণ্যস্নানের সময় ২৪ ঘণ্টা। এছাড়াও পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গঙ্গাসাগর মেলার জন্য থাকছে ২২৫০টি সরকারি বাস, ৫০০ বেসরকারি বাস। ৪টি বার্জ, ৩২টি ভেসেল, ১০০টি লঞ্চ এই সময়ে চলবে। এক টিকিটে গঙ্গাসাগরে যাওয়া-আসা করা যাবে। ১০টি ফায়ার স্টেশন, ২৫টি দমকলের ইঞ্জিন মোতায়েন থাকবে।
সুমন সাহা