TRENDING:

South 24 Pargana: 'মন্দার' ওয়েব সিরিজে মজনু বুড়ির চরিত্র, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের থেকে উঠে আসা অভিনেতার সাফল্যের কাহিনী

Last Updated:

মজনু বুড়ির চরিত্রে জনপ্রিয়তা লাভ, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের থেকে উঠে আসা সজল মন্ডল এর প্রশংসায় দর্শককুল

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
রুদ্র নারায়ন রায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ‘কালের কোলে কপাল ফেরে, কেউ রাজা, কেউ রাজার বাপ।' এহেন সংলাপের মধ্য দিয়েই ওটিটি প্লাটফর্মের হাত ধরে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে 'মন্দার'। অনির্বাণ ভট্টাচার্যের পরিচালনায় এই ওয়েব সিরিজ সারা ফেলেছে গোটা টেলি দুনিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল, সেই মজনু বুড়ির সংলাপের বিভিন্ন ক্লিপস। অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথমেই দর্শকের মন কেড়ে নিয়েছেন মজনু বুড়ি। অভিনয় দেখে বোঝা না গেলেও, আদতে মজনু বুড়ির মহিলা চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তিনি একজন পুরুষ। হ্যাঁ ঠিকই বলছি! অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
চরিত্রে অভিনয়ের সময়, সজল মন্ডল
চরিত্রে অভিনয়ের সময়, সজল মন্ডল
advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের বাসন্তীর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা সজল মন্ডল। বহু সময় ধরে রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, বর্তমানে মন্দারে মজনু বুড়ির চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন এই অভিনেতা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নেটিজেনদের প্রশংসায় সাফল্যের চূড়া ছুলেও, সজল মন্ডল এর এই দীর্ঘ চলার পথ কিন্তু এতটাও সহজ হয়নি। সুন্দরবনের বাসন্তীতে নিজের বাড়িতে বসে এদিন সাক্ষাৎকার দিলেও, তিনি জানান, 'এক সময় আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল ছিল না'। তার কথায়, 'বাবা, মা বাংলাদেশ থেকে অনেক আগেই এসেছিলেন। আমরা তখন কোনো মতে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। রাস্তার ধারে বাবা একটা মুদির দোকান করেছিলেন, সেটাই ছিল আমাদের একমাত্র উপার্জনের উৎস।' যদিও বর্তমানে সজল বাবুর বাবা, প্রশান্ত মন্ডল এর বাসন্তী বাজারের মধ্যে আজ একটা বড় দোকান হয়েছে। মা কবিতা রানী মন্ডল প্রথম থেকেই ছেলের যেকোনো পদক্ষেপে, আর্থিক অনটন কে উপেক্ষা করে হলেও পাশে থাকতেন। যৌথ পরিবারের ছেলে সজল মন্ডল এর বেড়ে ওঠা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের আর দশটি ছেলের মতোই অত্যন্ত সাধারণ ও কষ্টসাধ্য।

advertisement

এসবের মধ্যেও সজল মন্ডল এর অভিনয়ের প্রতি প্যাশন ছিল ছোট থেকেই। স্কুলজীবনে নিজেরা নাটক করেছেন। ১৯৯৮ সালে সুন্দরবন থেকে মাধ্যমিক পাশ করে কলকাতায় চলে আসেন কাজের খোঁজে। হঠাৎই একদিন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটকের কোর্সে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফর্মও তোলেন এবং চান্সও পেয়ে যান। কিন্তু কলকাতা শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকার মতো সামর্থ তখনো হয়ে ওঠেনি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সজলের। তাই তখন তিনি বাধ্য হয়েই একপ্রকার কলকাতা থেকে অনতিদূরে বারুইপুরের মল্লিকপুরে বাড়ি ভাড়া নেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো নানা কাজ করতে থাকেন ওই অঞ্চলেই। রবীন্দ্রভারতীতে জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে পড়ার সময় একটি সিনেমায়ও অভিনয় করার সুযোগ পান সজল মন্ডল। শ্যামল কর্মকারের ছবি ‘রাণু’র লিড রোলে অভিনয় করেই প্রথম পুরস্কৃত হন ও দর্শকদের প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেতা। এরপর, ‘বিস্ফোরণ’ বলে আরেকটি টেলফিল্মেও অভিনয় করতে দেখা যায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা সজলকে।

advertisement

রবীন্দ্রভারতী থেকে টুয়েলভ পাশ করে স্নাতক স্তরে ভর্তি। তারপর নাটকে এমএ পাশ। ২০০২ সাল থেকে থিয়েটারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জুড়ে যান সজল মন্ডল ওরফে থিয়েটার জগতের পরিচিত নাম 'পচা দা'। ২০০২-০৩ সালে বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিত সেনের সঙ্গেও বহু কাজ করেছেন তিনি। থিয়েটারের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক স্তরেও কাজ করেছেন সজল। আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ায়, এই থিয়েটার অভিনেতাকে বহু সুযোগও হাতছাড়া করতে হয়। সজল মন্ডল আক্ষেপের সুরেই জানালেন, 'বিদেশের ডান্স কোরিওগ্রাফি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাই করেছিলাম, কিন্তু এখান থেকে স্কলারশিপ না পাওয়ায় তিন মাস পরে ফিরে আসতে হয়। তারপর ২০০৮ সালে ‘ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা’-তে সুযোগ আসে। ডিজাইন টেকনিক নিয়ে পড়াশোনা করি। সেই সময় যে বন্ধুরা আমার পাশে ছিল তাদের অবদান ভোলার নয়।' সম্ভবত, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায়' সুযোগ পাওয়া প্রথম ব্যক্তিই এই সজল মন্ডল।

advertisement

View More

এরপর, প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে ভিন রাজ্যে কাজের সুযোগ থাকলেও, ফিরে আসেন নিজের এলাকায়। সুন্দরবনে ‘ম্যানগ্রোভ থিয়েটার সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন ও বনবিবি পালার নির্দেশনা দেন। শুধু তাই নয়, সুন্দরবনে সমাজমূলক কাজেও জড়িত তিনি। আয়লা থেকে আমফান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই অভিনেতা। লোকশিল্পীদের সবরকম সাহায্য করা থেকে মহিলাদের মেনস্ট্রুয়াল সচেতনতা নিয়েও বর্তমানে কাজ করে চলেছেন মজনু বুড়ির চরিত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করা সজল মন্ডল।

advertisement

কিন্তু কিভাবে মন্দার ওয়েব সিরিজে এই মজনু বুড়ির চরিত্র ধরা দিল সজল মন্ডল কে! অভিনেতা জানালেন, 'পূর্ব পরিচিত থাকলেও, লকডাউন এর সময় সুন্দরবনে লোকাল আর্টিস্টদের সাহায্য করতে আসেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী মধুরিমা। সেই সময়ই মজনু বুড়ির চরিত্রে বছর চল্লিশের পচা দা (সজল মন্ডল) কে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন পরিচালক অনির্বাণ।'

পুরুষ হয়েও বৃদ্ধা মহিলার চরিত্রে মন্দারে অভিনয় করাটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের ছিল বলেই জানালেন সজল। হাঁটু অবধি সাদা শাড়ি, এলোকেশ, কপাল মাখা লাল সিঁদুর। অথচ সে কোন দেবী নয়, ডাইনি বুড়ি। মেকাপের নিপুন হাত কোনভাবেই বুঝে উঠতে দেয়নি সজল মন্ডলই সেই মজনু বুড়ি।

চোখে একপ্রকার আনন্দের অশ্রু নিয়েই, সজল মন্ডল বললেন, 'মন্দারে মজনু বুড়ির চরিত্রে অনির্বাণ যে আমাকে ভেবেছে এবং আমার অভিনয় যে এত মানুষের ভাল লাগছে তা আমার পরম প্রাপ্তি।'

কোন প্রতিবন্ধকতাই যে জীবনে বাধা হতে পারে না, তারই নজির গড়লেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের থেকে উঠে আসা অভিনেতা সজল মন্ডল। লক্ষ্য স্থির থাকলে তা পূরণ হবেই, আর সাফল্যও ধরা দেবে। অভিনেতার জন্মদিনে তাই নিউজ এইট্টিন লোকাল এর তরফ থেকে রইলো শুভকামনা। মজনু বুড়ির পরে, আরো এরকম বহু চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয়ে সজল মন্ডল কে দেখার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে দর্শক মহলে।

বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণ ২৪/
South 24 Pargana: 'মন্দার' ওয়েব সিরিজে মজনু বুড়ির চরিত্র, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের থেকে উঠে আসা অভিনেতার সাফল্যের কাহিনী
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল