সম্প্রতি ইলিশ মাছ কেনা নিয়ে মেছেদা বাজারে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এক ক্রেতা অভিযোগ তোলেন জনৈক মৎস্য ব্যবসায়ী তাকে বহু মূল্যের বদলে নকল ইলিশ গছিয়ে দিয়েছেন। আসল নকল ইলিশ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে জনমানসে। সাধারণভাবে এসব মাছ ইলিশের চেয়ে চওড়ায় কম এবং চোখের আকার বড়। এসব মাছে ইলিশের গন্ধ নেই। একটু ভালো করে খেয়াল করলেই বোঝা যায়। চেহারায় কিছুটা ইলিশের মত থাকায় মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে ঠিকই তবে ভালো করে খেয়াল করলে পার্থক্য বোঝা যায়। ইলিশ মাছের এলাকা পারস্য উপসাগর হতে বঙ্গোপসাগর হয়ে চীন উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে বাংলাদেশ, মায়নমার ও ভারতেই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ইলিশ। শতাব্দী প্রাচীন কাল থেকে ইলিশ হিলসা নামে পরিচিত ছিল। টেনুয়ালোসা ইলিশা হয়েছে। টেনুয়ালোসা গনের পাঁচটি প্রজাতির মধ্যে দুটি প্রজাতির ইলিশ আমাদের পরিবেশে পাওয়া যায়, যার একটি টেনুয়ালোসা ইলিশা, অপরটি টেনুয়ালোসা টলি।
advertisement
টেনুয়ালোসা টলি চন্দনা ইলিশ নামে পরিচিত যার ইংরেজি সাধারণ নাম টলি সেড।টেনুয়ালোসা গনের মাছ ছাড়াও হিলশা গন ভুক্ত হিলশা কেলি প্রজাতীর ইলিশ মাছ ও পাওয়া যায়। তাই ইলিশ মাছ বলতে টেনুয়ালোসা গনের এই দুটি মাছ ও হিলশা গনের কানাগুর্তা ইলিশ বা কেলি অন্তর্ভুক্ত। টেনুয়ালোসা ইলিশা ও টেনুয়ালোসা টলি (চন্দনা ইলিশ) চেনার উপায় কি ?চন্দনা ইলিশের বক্ষ কাঁটা ৩০ টির কম থাকে, পুচ্ছ পাখনাও তুলনামূলক ছোট হয়, নীচের চোয়াল বড়। ছোট ইলিশের সঙ্গে খয়রা মাছেরও চেনার বিভ্রান্তির কথা শোনা যায়। খয়রা মাছ ও ইলিশ একি পরিবারের (ক্লুপিডে) মাছ হলেও গন আলাদা। খয়রা গাডুসিয়া গনের ইলিশ টেনুয়ালোসা গনের অন্তর্ভুক্ত। খয়রা মাছ ও ইলিশ চেনার উপায় কি? খয়রা মাছ পিঠের চেয়ে মেটের দিকে বেশি ফোলা, প্রশস্ত এবং ইলিশের তুলনায় পাতলা হয়, যেখানে ইলিশ দুইদিকেই সমানভাবে উত্তল ও মোটা। ইলিশের তুলনায় খয়রা মাছের চোখ বড় হয়।
আবার ইলিশের মাথা লম্বাটে ও অগ্রভাগ সূচালো কিন্তু খয়রা মাছের মাথার আকৃতি অপেক্ষাকৃত খাটো ও অগ্রভাগ ভোঁতা। আর গন্ধেই ধরা পড়ে যাবে ইলিশ আর খয়রা, আবার ইলিশের সঙ্গে সার্ডিন বা টাকিয়া মাছ চিনতে অনেকে ভূল করতে পারেন। সার্ডিন ও ইলিশ চেনার উপায়? সার্ডিনের দেহ পার্শ্বীয়ভাবে পুরু এবং পিঠের দিকের চেয়ে পেটের দিক অপেক্ষাকৃত উত্তল ও চ্যাপ্টা। ইলিশের দেহ পার্শ্বীয়ভাবে পুরু, পিঠের ও পেটের দিক প্রায় সমভাবে উত্তল। সার্ডিনের দৈর্ঘ্য সাত সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ইলিশ বেশ বড় (৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত) হয়ে থাকে। সার্ডিনের মাথার আকৃতি ছোট ও অগ্রভাগ ভোঁতা। ইলিশের মাথার আকৃতি লম্বাটে ও অগ্রভাগ সূচালো। সার্ডিনের পৃষ্ঠীয় পাখনার অগ্রভাগে এবং পুচ্ছ পাখনার কিনারা ঘোলাটে। ইলিশের পৃষ্ঠীয় পাখনার অগ্রভাগে এবং পুচ্ছ পাখনার কিনারা অনেকটা ফ্যাকাশে।
আরও পড়ুনঃ লোকমুখে প্রচলিত মাহাত্ম্য, কী রীতি পালনে বিপত্তারিণী মায়ের পুজো হয় বর্গভীমা মন্দিরে
সার্ডিনের চোখের আকৃতি তুলনামূলকভাবে বড়। আসল ইলিশের চোখের আকৃতি তুলনামূলকভাবে ছোট। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই আসল এবং নকল ইলিশের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যাবে। যাইহোক গন্ধেই ইলিশ চেনা যাবে। দেখতে যতই কাছাকাছি হোক না কেন। ইলিশের দেহের সুঘ্রান ভাজার সময় আশে পাশে ছড়িয়ে পড়ে। এমনিতে ইলিশ মাছ খাদ্য উপাদান ও খাদ্যমানেও অত্যন্ত সম্বৃদ্ধ। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, ফ্যাট ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: সঙ্গমের পরেই তলপেটে ব্যথা? রক্তপাত? জানেন কিসের ইঙ্গিত? ভয় পেয়ে যাবেন!
ইলিশ মাছের চর্বিতে প্রায় অর্ধেক শতাংশ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড (২% ওমেগা-৩) থাকে। ইলিশ মাছের প্রোটিনে নয় ধরনের ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় যা মানুষের পাকস্থলী উৎপাদন করতে পারে না ইলিশের তেলে উচ্চ পরিমান ভিটামিন “এ”, “ডি” ও অল্প পরিমান “বি” পাওয়া যায়। এবং ইলিশ মাছে ওষুধি গুন আছে বলে কিছু গবেষক দাবি করেন। তাই সকল দিক দিয়েই ইলিশ ইলিশই। বাজারে গিয়ে একটু সচেতনভাবেই লক্ষ্য করলে আসল ইলিশ ও নকল ইলিশ সহজেই পার্থক্য করা যায়।
Saikat Shee