বর্ধমান হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের হেরিটেজ অংশ কোনরকম প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই অবৈধ দখলদাররা বুলডোজার এনে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কলেজের পড়ুয়ারা তার প্রতিবাদ করলে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছছ বর্ধমানের রাজগঞ্জে অবস্থিত হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: সীমান্তের পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার গুলি সহ পিস্তল!
advertisement
সম্ভবত ১৭৩০ সালে বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজ কীর্তিচাঁদ মহান্ত এই জায়গাটি তৈরি করেছিলেন। চন্দ্রকোনা এবং ঘাটালে যুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের কয়েকজন সাধু তাঁকে জয়ী হওয়ার আশীর্বাদ করেন। বিজয়ী হয়ে ফিরে এসে মহারাজা তাঁর কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা স্বরূপ রাজগঞ্জে একটি প্রাসাদ সহ বহু কক্ষ বিশিষ্ট মহন্ত স্থল নির্মাণ করান। এখানে একটি প্রাচীন রঘুনাথ কৃষ্ণমূর্তির মন্দিরও আছে। নিত্য পুজোর ব্যয় বহনের জন্য পাঁচশো বিঘে জমিও দান করেন। এটি বর্ধমান শহরের গুরুত্বপূর্ণ হেরিটেজ স্থানগুলির অন্যতম একটি। বর্তমানে এখানে হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অবস্থিত। এই হেরিটেজ ভবন বর্তমানে হোমিওপ্যাথি হাসপাতাল ও কলেজ সোসাইটির অধীনে বলে দাবি করা হয়েছে। অন্য দিকে মন্দিরও তাঁরাই দেখভাল করেন বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি কিছু বহিরাগতের আগমনে এই হেরিটেজ ভবন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। বহিরাগত রা ষড়যন্ত্র করে মন্দির দেখাশোনার নামে মন্দিরের উপর তাদের মালিকানা দাবি করে বসে বলে জানিয়েছে হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনকি বহিরাগতরা একটা ট্রাস্টও গঠন করে। যদিও সেই ট্রাস্টের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তবে ট্রাস্টের মাথায় আছেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস। বিধায়ক খোকন দাস আবার বর্ধমান হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে সোসাইটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।
সম্প্রতি মন্দির সংস্কারের নামে সেটি ওই বহিরাগতরা কব্জা করে নেয় বলে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি। এরপর তারা বুলডোজার নিয়ে হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ চত্বরে ঢুকে ঐতিহাসিক হেরিটেজ স্থাপত্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়ারা বিষয়টি বিধায়ক খোকন দাসকে জানান। কিন্তু তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই ওই ঐতিহাসিক স্থাপত্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্যকে। এই প্রসঙ্গে বিধায়ক খোকন দাস জানান,
ওখানে মন্দিরের ব্যাপার একটা ট্রাস্ট আছে। ওরা বলছে ওই জায়গাটা হেরিটেজ নয়। ওরা ওদের মন্দির বাড়ানোর জন্য ভেঙেছে। কিন্তু আমরা দেখেছি ওটা ভাঙতে গিয়ে অনেকটা জায়গা হোমিওপ্যাথি কলেজের ওর মধ্যে ঢুকে গেছে। হোমিওপ্যাথি কলেজের পক্ষ থেকে আমাকে জানানোর পরই প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বন্ধ করে দেয়। প্রশাসন থেকে মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ দুতরফের লোককে ডাকা হবে। সেখানে আমিও থাকব। যে যার কাগজ দেখাবে। তখনই প্রমাণ হয়ে যাবে জায়গাটি আসলে কার।
এই প্রসঙ্গে ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যস জানান, ১০০ বছরের পুরনো যে কোনও স্থাপত্য হেরিটেজ।
সেখানে ৩০০ বছরের প্রাচীন একটি স্থাপত্য কীভাবে রাতারাতি ভেঙে ফেলা হল তা নিয়ে বিস্মিত শহরবাসী।