দিন কয়েক পরেই বাঙালি প্রানের উৎসব দুর্গাপুজো। ইতিমধ্যে শরতের আকাশ আর কাশফুল জানান দিচ্ছে মা দুর্গার মৃন্ময়ী রূপে আগমনের কথা। বিভিন্ন জায়গায় বর্তমানে জোর কদমে চলছে মূর্তি তৈরির কাজ। মূর্তি তৈরির পর বিভিন্ন সাজ, পোশাক,অলংকারে সাজিয়ে দেবী দুর্গাকে নিয়ে উৎসবে মাতবে আপামর বাঙালি। কিন্তু এ সবের মাঝেও পূর্ব বর্ধমানের এমন এক গ্রাম রয়েছে, যেখানে আসে না কোনও দুর্গা প্রতিমা। পূজোর আগে এখানে চোখে পড়ে না মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির সেই চেনা ছবি। কারণ অন্যরূপে দেবী পুজিতা হন এইখানে। বহু বছর ধরে এই প্রথাই মেনে আসছেন গ্রামবাসীরা।
advertisement
পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে দুর্গা পূজা উপলক্ষে কোনও দেবী প্রতিমা আসে না। আজ বছরের পর বছর এই নিয়মই চলে আসছে এই গ্রামে। এখানে দেবী পূজিতা হন যোগাদ্যা রূপে।
গ্রামেরএই বিশেয প্রথা সমন্ধে দেবী যোগাদ্যার পুরোহিত কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন , “আমাদের মা যোগাদ্যা হচ্ছেন দশভুজা। যেহেতু আমরা সারা বছরই মা যোগাদ্যার দশভূজা মূর্তি পূজা করি, সেহেতু অন্য কোনও দশভূজার প্রতিমা মূর্তি আমাদের এখানে আসে না। একমাত্র আমাদের যে নবপ্রত্রিকা বাঁধা হয়, সেই নবপত্রিকাকেই দুর্গা রূপে পুজো করা হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী এটাকেই পুজো করা হয়।” তিনি আরও জানান, এই গ্রামে দেবী যোগাদ্যার বাড়িকে নিয়ে মোট ছয় জায়গায় এইভাবে পুজো করা হয়।
অন্য দিকে নিজেদের গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন এই রীতি সম্বন্ধে গ্রামের মানুষ বলেন, “আমাদের গ্রামে প্রতিমা আসেনা , কলাবউ দিয়েই পূজা হয়। আমরা ছোটওথেকেই দেখছি। সবাই মেনেও নিয়েছি। বাইরে থেকেও লোকজন আমাদের গ্রামে আসে, ভালই লাগে।”
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে বদল এসেছে বিভিন্ন জায়গার দুর্গাপূজার রীতি নীতিতে। বদলেছে পুজোর ধরণ, প্রতিমার আদল , অনেক কিছুই। তবে এত বছরেও বদলায়নি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামের এই প্রাচীন রীতি। আজও দুর্গা পুজোর সময় কোনও দেবী দুর্গার মৃণ্ময়ী রূপ নয়, বরং দেবী যোগাদ্যাকেই মহামায়া রূপে পুজো করা হয়। সেইসঙ্গে পূজিতা হন দেবীর নবিপত্রিকা রূপ। আর এই ভিন্নধর্মী পুজোকে ঘিরেই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন ক্ষীরগ্রামের আপামর গ্রামবাসী।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী