তবে গভীর রাতের শেষে পুব আকাশে যেমন দেখা দেয় রবির কিরণ, তেমনই এই জায়গাটিকে কলঙ্কমুক্ত করে তুলতে এগিয়ে আসেন ডাঃ হরমোহন সিংহ। তিনি এক সময় কাটোয়ার দাপুটে বিধায়ক ছিলেন। কিন্তু ১৯৮৮ সালে রাজনৈতিক জীবন থেকে স্বেচ্ছায় সন্ন্যাস নিয়ে সমাজ সংস্কারে ব্রতী হন। নতুন কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন কাটোয়া শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই 'জামাইমারি সরান'-কে।
advertisement
এখানে গড়ে তোলেন সমাজের উপেক্ষিত অবহেলিত নাগরিকদের জন্য এক বিরাট পুনর্বাসন কেন্দ্র, যার নাম দেন 'আনন্দ নিকেতন'। শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষেরা এখানকার মুক্ত প্রাঙ্গনে নিজেদের পিছিয়ে পড়া বলে মনে করেন না। সমাজের নির্বাসিতদের আবার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাই আনন্দ নিকেতনের আদর্শ ও মূল মন্ত্র।
আরও পড়ুন: স্কুল স্পোর্টস থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শিশুর পাশে শিক্ষক-শিক্ষিকারা
পুনর্বাসন কেন্দ্রের যে বীজ ডাঃ হরমোহন সিংহ বপন করেছিলেন তা আজ মহীরূহে পরিণত হয়েছে। তাঁর তৈরি করা এই প্রতিষ্ঠান আজ কেবলমাত্র বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কেন্দ্রতেই সীমাবদ্ধ নেই। এর ভিতরে গড়ে উঠেছে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে স্পেশাল এডুকেশনে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। এলাকার মানুষ ও এখানকার আবাসিকদের একসূত্রে বাঁধতে প্রতি বছর ৩১ জানুয়ারি এখানকার আবাসিকদের নিয়ে আয়োজিত হয় এক গ্রামীণ মেলা। যার নাম 'আনন্দনিকেতন গ্রামীণ মেলা'। যেখানে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের হাতের কাজ সকলের কাছে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন স্টলের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি আনন্দ নিকেতনের কর্মীরাও বিভিন্ন স্টল দিয়ে থাকেন। এই মেলা সাত দিন ধরে চলে। মেলায় যাত্রার আসরের পাশাপাশি লোকশিল্পীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
গত ১ জানুয়ারি মহানকর্মবীর ও কাটোয়ার প্রাক্তন বিধায়ক ডাঃ হরমোহন সিংহ প্রয়াত হয়। এই মহান কর্মযোগী নিজে না থাকলেও তাঁর জেদ, লক্ষ্যে অবিচল থাকার নিষ্ঠা, আদর্শ, জনদরদি মনোভাব মিশে রয়েছে আনন্দ নিকেতনের প্রতিটা কোনায়।