কথিত আছে সেই সময় গ্রামেরই একটি পুকুর খননের সময় সাত পুতুলের একটি চতুর্ভুজা শিলামূর্তি উঠে আসে। তারপর সেই রাত্রে মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে দরিদ্র ব্রাহ্মণ গোরাচাঁদ ঘোষাল ওই চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটিকে মা দুর্গা রূপে পুজো করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে কালে কোনও এক অজানা কারণে সেই চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটি ভেঙে গেলে, তারপর সেটাকে গঙ্গার জলে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দিয়ে আসা হয় এবং তারপর সেই সাত পুতুলের চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটির আদলেই মাটির মূর্তি গড়ে প্রতি বছর মা দুর্গার পুজো হতে থাকে এখানে।
advertisement
আরও পড়ুন South24Parganas News: কোন রুটে গেলে পুজো দেখা সহজ হবে? সামনে এল গাইড ম্যাপ
প্রতি বছর দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন থেকে সদর বাড়ির দুর্গা পুজো শুরু হলেও, মহালয়ার আগে বোধনের তিথি থেকে মায়ের মন্দিরে পুকুর থেকে ঘট ভরে নিয়ে আসেন শরিকেরা। সপ্তমীর দিন সকালে চারজন ব্রাহ্মণ বালকের কাঁধে চড়ে দোলায় চাপিয়ে নবপত্রিকাকে পুকুর থেকে স্নান করিয়ে মন্দিরে নিয়ে আসা হয় ঢোল ও সানাই বাজিয়ে।
গ্রামের দুঃস্থ ব্রাহ্মণ গোরাচাঁদ ঘোষালের তখন সেইরকম ভাবে আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সেই সময় তিনি মা দুর্গাকে হাতে গড়া রুটি এবং গুড়ের পায়েস দিয়ে ভোগ দিতেন। তবে বর্তমানে বিভিন্ন ফলমূল, মিষ্টি, লুচি, পায়েস, হাতে গড়া রকমারি নাড়ু সহ প্রভৃতি হরেক রকমের পদের সহযোগে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয় পুজোর সময়।
আরও পড়ুন Murshidabad Durgapuja 2022: ৭৫ফুটের দুর্গা ঠাকুর! দেখতে লাইন পড়ছে প্রচুর
সদর বাড়ির মা দুর্গা শাক্ত মতে পুজিত হন। তাই এখানে বলিদান প্রথাও রয়েছে। দুর্গা পুজোর সপ্তমী ও নবমীতে আখ ও চালকুমড়ো বলি এবং মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে ছাগ পশুর বলিদান দেওয়া হয় এখানে। অতীতে গোরাচাঁদ ঘোষাল প্রথমে একাই এই 'সদর বাড়ির' দুর্গাপুজোর সূচনা করলেও, বর্তমানে নিরোল গ্রামের ব্রাহ্মণ পাড়ার মজুমদার, মুখোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায় এবং বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সকল সদস্যরা দৌহিত্র সূত্রে এই দুর্গা পুজোর শরিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তাই এখন প্রতিবছরই খুবই জাঁকজমক ও নিষ্ঠাভাবে এবং ধুমধামের সঙ্গে মহা সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয় 'সদর বাড়ির' এই দুর্গাপুজো।
সদর বাড়ির দুর্গা পুজোর বিশেষত্ব হল এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত পুরোহিত, মৃৎশিল্পী, পুস্প সরবরাহকারী নাপিত, বলিদান করার কামার এবং ঢোল ও সানাই বাদক সহ সকলেই এই দুর্গাপুজোর সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে বংশ পরম্পরায় যুক্ত রয়েছেন এখনও পর্যন্ত। সদর বাড়ির দুর্গা পুজোর অধিকাংশ শরিকেরা কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকলেও, দুর্গাপুজোর কটাদিন গ্রামে এসে মহানন্দে মহামায়ার আরাধনায় একসঙ্গে মেতে ওঠেন সকলে মিলে।
Malobika Biswas