পূর্ব বর্ধমান জেলার, কাটোয়ার সুদপূর গ্রামের বর্তমান বাসিন্দা চিত্রা দাস। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। পরবর্তীতে স্বামী গত হওয়ার পর, ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে আসেন বাপের বাড়ি সুদপূরে। প্রথম দিকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে রোজগার করতেন। এভাবেই কষ্ট করে বড় করে তোলেন ছেলেকে।
আরও পড়ুন: মুদ্রা, কয়েন, স্ট্যাম্প নয়…, আশ্চর্য নেশায় বুঁদ! চমকে দেবেন কোচবিহারের ‘রেডিও ম্যান’
advertisement
পরিস্থিতির কিছুটা বদলও হয়। একদিন কথার ছলে ছেলে প্রস্তাব দেয় একটা মহিলা ঢাকির দল গড়তে। গ্রামের বেশ কিছু মহিলার সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনা করলে অনেকেই রাজিও হয়ে যান। কিন্তু ঢাক কীকরে পাওয়া যাবে? কাটোয়ার একটা ঢাকের দোকানে ঢাক কিনতে গিয়ে বেশ হতাশ হন দাম শুনে। বাকিদের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। আর্থিক অনটন কম বেশি সকলেরই। তবে হার মানতে রাজি নন কেউই।
আরও পড়ুন: গাঢ় না হালকা…? কোন ডিমের কুসুম বেশি স্বাস্থ্যকর? কেনার আগে সত্যিটা জানুন!
শেষমেশ ধার দেনা করে শেষপর্যন্ত কেনা হয় ঢাক।এবার কোথায় শিখবেন ঢাক বাজানো?যোগাযোগ করা হয় গ্রামেরই ঢাক মাস্টার নাদু দাসের সঙ্গে। শুরু হয়প্রশিক্ষণ নেওয়া। প্রথমদিকে পাড়া – প্রতিবেশি, বাড়ির লোকের কাছে বহু কটূক্তি শুনতে হয়েছে। তবে কটূক্তির পরোয়া না করেই জারি থাকে লড়াই। আজ সেই সম্সত দিনের কথা মনে করে দলের সদস্যরা জানান, যারা বারণ করেছিল তখন, তাঁরাই আজ প্রশংসা করছেন। এমকি অনেক মেয়েদের স্বামীরা এখন তাঁদের স্ত্রীদের আমাদের দলে নেওয়ার জন্য অনুরোধও করছেন।
আরও পড়ুন: ঘরে সাপ ঢুকেছে? ঘাবড়াবেন না… এই কাজটি করলে সহজেই পালাবে বিষধর..!
আজও চিত্রা ঢাকি এলাকার রীতিমতো একজন সেলিব্রিটি। এই মহিলা ঢাকি এখন তাঁর ঢাকের তালে নাচিয়ে বেড়াচ্ছেন ভিন জেলা এমনকী ভিন রাজ্যেরও বহু মানুষকে। ঢাক নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন অসম, উড়িষ্যা, ভুবনেশ্বর, ত্রিপুরা, কলকাতা, গুয়াহাটি, পুরুলিয়া আরও বহু জায়গায়।
পুজো আসার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় চিত্রা দেবীর ঢাকের দলের রেওয়াজ। পুজোর প্রায় কিছুদিন আগে থেকেই বেরিয়ে যান রাজ্য তথা ভিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। চিত্রা ঢাকি তাঁর এই অদম্য চেষ্টায় আজ শুধু নিজেই নন, গ্রামের অরও অনেক গরিব মহিলাকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করেছেন।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী