বাঙালির দুর্গাপুজোয় আজও বেশ খানিকটা অন্যমাত্রা যোগ করে বনেদি বাড়ির পুজো গুলি। থিম ভাবনার বিষয় বৈচিত্রের মধ্যেও, নিজস্ব রীতিরেওয়াজ আর বনেদিআনায় ভর করে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই পুজো গুলি। তেমনি এক পুজো পূর্বস্থলী ২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মুকশিমপাড়ার হালদার বাড়ির পুজো। পরিবারের সদস্যদের কথায়, ” আজও প্রায় ৫০০ বছর ধরে নিজস্বতা বজায় রেখে চলে আসছে এই পুজো। প্রথম শুরু করেন অনন্তরাম বন্দ্যোপাধ্যায় । অনন্তরামের পরের পুরুষ জমিদারি পান , যার জেরে পদবি বদলে হয় হালদার। নিয়ম মেনে তাঁর সময় প্রতিষ্ঠা করা মন্দিরেই ঐতিহ্য মেনে হয়ে আসছে দেবীর আরাধনা। এই পরিবারের পুজোর এক বিশেষ রীতি হল সন্ধি পুজোর সময় গুলি ছোড়ার রেওয়াজ। যে নিয়ম পরিবারের সদস্যরা মেনে চলেছেন আজও।”
advertisement
এই প্রসঙ্গে পরিবারের সদস্য অদিত কুমার হালদার বলেন,
“পুজো আমাদের ষষ্ঠী থেকে শুরু হয় দশমী পর্যন্ত চলে । ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পর্যন্ত আমাদের নিরামিষ ভোগ হয় । খিচুড়ি প্রসাদের সঙ্গে থাকে নয় রকম প্রসাদ। সন্ধি পুজোতে এবার যেমন সময় আছে ৫:৪৫ । এই সময় ঘড়ি ধরে পূর্বপুরুষের রীতি অনুযায়ী এখনও বন্দুক দিয়ে শূন্যে ফায়ার হয় । তারপরই শুরু হয় সন্ধিপুজো ।”
পুরানো দিনের ভগ্নপ্রায় সেই মন্দিরে আজও দেবীর আরাধনা হয়ে আসছে। এছাড়াও পূর্বস্থলী হালদার বাড়ির পুজোয় রয়েছে নানাবিধ নিয়ম। একই সঙ্গে পুজোর চারটে দিন নরনারায়ণ সেবা, কুমারী পুজোর মতন রীতিও রয়েছে। সব মিলিয়ে হালদার বাড়ির এই পুজোকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে ওঠে এলাকা। আনন্দের সঙ্গে পুজো উপভোগ করেন সকলেই।
এই বিষয়ে মহাদেব কুমার হালদার জানান, ” পুজোর সময় আমরা খুব আনন্দের সঙ্গে কাটাই । এখানে এটা আমাদের বাড়ির পুজো, আমরা সবাই আনন্দের সঙ্গেই কাটাই । বাইরে থেকে আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন আসেন, আমরা একসঙ্গে একত্রিত হয়ে খাওয়া-দাওয়া করি ।”
হালদার বাড়ির দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনও হয় অন্যভাবে। ২০ থেকে ২৫ জন মিলে কাঁধে করে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে ঘোরে গোটা গ্রাম । তার পর নতুনপুকুর নামে হালদার পরিবারেরই একটি পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন করা হয় । পূর্বপুরুষের হাত ধরে শুরু হওয়া সেই রীতি আজও পালিত হয় ।