সম্প্রতি আকাশে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যা যে কোনও বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনায় প্রায় ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা একটি ভিভিআইপি বিমানের জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) হঠাৎ আটকে যায়। সৌভাগ্যবশত, পাইলটরা তাঁদের দক্ষতায় প্লোভদিভ বিমানবন্দরে বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন। যদি তা না হত, যদি এই ঘটনায় পাইলটরা সামান্য একটা ভুলও করতেন, তাহলে বিমানটিকে বিধ্বস্ত হওয়া থেকে আটকানো কারও পক্ষে সম্ভব হত না।
advertisement
ঠিক সেই কারণেই এখন এই ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত। যখন তাঁর বিমানটি বুলগেরিয়ার উপর দিয়ে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ এর জিপিএস এবং রাডার জ্যাম হয়ে যায়। এই বিমানের নিরাপদ অবতরণের পর ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র আরিয়ানা পোডেস্তা ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন যে বিমানের জিপিএস সিগন্যালে হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল। বুলগেরিয়ান কর্মকর্তারা এই ঘটনাটিকে রাশিয়ার স্পষ্ট হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইনকে বহনকারী বিমানের জিপিএস জ্যাম করার জন্য মস্কোকে সন্দেহ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বুলগেরিয়ান কর্মকর্তারা, কমিশন বুলগেরিয়ান কর্তৃপক্ষকে রাশিয়ার স্পষ্ট হস্তক্ষেপের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করার কয়েকদিন পরে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী রোজেন ঝেলিয়াজকভ বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে বলেছেন যে ভন ডের লেইনের বিমানটি দীর্ঘ দিন ধরে কোনও বাধা বা জ্যামিং অনুভব করেনি। একই দিনে পরে দেওয়া এক বিবৃতিতে ঝেলিয়াজকভ বলেন যে যদিও গ্রাউন্ড ইন্সট্রুমেন্ট দ্বারা কোনও জ্যামিং শনাক্ত করা যায়নি, তবুও অনবোর্ড ডিভাইস দ্বারা জ্যামিং শনাক্ত করার সম্ভাবনা পুরোপুরি বাদও দেওয়া হয়নি।
যদিও এটা ইতিমধ্যে বিশ্লেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে বিমানটিতে জিপিএস হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা ছিল, সমস্যা এই যে এলাকায় জ্যামিং শনাক্ত করা হয়নি। এখন তাই বড় প্রশ্ন এই যে আকাশে কি এমন কোনও ষড়যন্ত্র সম্ভব?
জিপিএস এবং রাডার কীভাবে জ্যাম করা হয়?
এয়ার নেভিগেশন সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন যে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে বিমানের জিপিএস এবং রাডার সিস্টেম জ্যাম করা যেতে পারে, কিন্তু তা করা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। এটি করার জন্য বিশেষ জলযানের প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে বিশেষ জ্যামার ডিভাইস স্থাপন করা থাকে। এই জ্যামার ডিভাইসগুলির মাধ্যমে বিমানের জিপিএস ব্যান্ডে একটি বিশেষ শব্দ তৈরি হয়। এই শব্দ বিমানের আসল সঙ্কেতগুলিকে ছাপিয়ে যায়। এই শব্দের কারণে বিমানের রিসিভার লকগুলি অক্ষম হয়ে যায় এবং জিপিএস সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে জ্যাম হয়ে যায়।
বিমানের জিপিএস লক হয়ে গেলে কী হবে ?
বিমানের জিপিএস জ্যাম হলে পাইলটকে অনেক বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে। আসলে, জিপিএস বিমানের সঠিক অবস্থান, দিক এবং উচ্চতা সম্পর্কে তথ্য দেয়। জ্যাম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানের নেভিগেশন সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায় এবং বিমানটি ভুল দিকে যেতে পারে। সঠিক উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা না পাওয়ার কারণে এটি বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিমানের পাইলটকে ইনার্শিয়াল নেভিগেশন বা রেডিও নেভিগেশনের উপর নির্ভর করতে হয়, তবে এটিও যদি কাজ না করে তবে পরিস্থিতি খুব গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পাইলটকে ম্যানুয়াল মানচিত্র এবং এটিসি ব্যবহার করে নিকটতম বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে হয়।
জিপিএস জ্যামের ষড়যন্ত্র এড়ানো কতটা সম্ভব ?
বিমানের জিপিএস সিস্টেম জ্যাম করে এমন জাহাজগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত। কিছু জায়গায় এগুলি শ্যাডো ফ্লিট এবং কিছু জায়গায় ডার্ক ফ্লিট বা গ্রে ফ্লিট নামে পরিচিত। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত পেট্রোলিয়াম চোরাচালানকারী জাহাজগুলি নিরাপত্তা সংস্থার রাডার এড়াতে তা ব্যবহার করত। কিন্তু এখন এগুলিকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। জিপিএস জ্যামে আটকে পড়া বিমানগুলির কাছে খুব বেশি কিছু করার থাকেও না। একটিমাত্র বিকল্প হল ম্যানুয়ালি ম্যাপ দেখা এবং বিমানের জরুরি অবতরণ। এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বিমানে প্রয়োজনীয় সিস্টেম রয়েছে ঠিকই, তবে কেবল অভিজ্ঞ এবং বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত পাইলটরাই এটি ব্যবহার করতে পারেন।