একই নামের ২ ছবি, বাবারটা তেমন চলেনি, ২২ বছর পর ইতিহাস গড়লেন ছেলে ! ৫৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তুললেন ১৯৩ কোটি টাকা
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
2 Flims With Same Name: এই বাবা-ছেলে জুটি আর কেউ নন- যশ জোহর-করণ জোহর। ছবির নাম 'অগ্নিপথ'।
বলিউডে একই নামে অনেক ছবি তৈরি হয়েছে। কিছু হিট হয়েছে, আবার কিছু সুপার ফ্লপ হয়েছে। অনেক সময়েই ছায়াছবির নির্মাতারা এই ভাগ্যের জুয়া খেলেছেন। কিন্তু অনেকেই সেই বাবা-ছেলের জুটিকে চেনেন না যাঁরা একই নামে দুটি ছবি তৈরি করেছিলেন, একটি ফ্লপ হয়েছিল এবং পরিচালকের মন ভেঙে গিয়েছিল, কিন্তু ২২ বছর পর ছেলে একই নামে একটি ছবি তৈরি করেছিলেন এবং সেই ছবিটি বক্স অফিসে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
advertisement
এই বাবা-ছেলে জুটি আর কেউ নন- যশ জোহর-করণ জোহর। ছবির নাম ‘অগ্নিপথ’। বলিউডের ইতিহাসে একই নামে নির্মিত দুটি ছবির তুলনা সব সময়ই আলোচনার বিষয়বস্তু। ১৯৯০ এবং ২০১২ সালে একই নামে দুটি ছবি তৈরি হয়েছিল। ছবির নাম ‘অগ্নিপথ’। দুটি ছবির নামই একই ছিল, কিন্তু তাদের ভাগ্য এবং বক্স অফিসের যাত্রা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। যশ জোহর ১৯৯০ সালে এটি তৈরি করেছিলেন এবং ছেলে করণ জোহর ২০১২ সালে রিমেকটি নিয়ে এসেছিলেন।
advertisement
হিন্দি সিনেমার সেই সব প্রযোজকদের মধ্যে যশ জোহরকে গণ্য করা হয় যাঁরা বলিউডকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি একজন চলচ্চিত্র আলোকচিত্রী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রের জগতে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে তিনি চিরকাল এখানেই থেকে যান। যশ জোহর অভিনেত্রী মধুবালার ছবিও তুলতেন, নায়িকা কাউকে সহজে তাঁর ছবি তুলতে দিতেন না। ফটোগ্রাফি ছেড়ে যশ জোহর অনেক ছবির প্রযোজনার দায়িত্ব নেন। যশ দেব আনন্দের নবকেতন সিনেমা প্রোডাকশন হাউসের ব্যানারে অনেক ছবির প্রযোজনার দায়িত্ব নেন। পরে তিনি ধর্ম প্রোডাকশনের মতো একটি বড় প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এর অধীনে তিনি 'দোস্তানা', 'অগ্নিপথ', 'গুমরাহ', 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' এবং 'কভি খুশি কভি গম'-এর মতো ছবি প্রযোজনা করেন।
advertisement
তাঁর চলচ্চিত্রগুলো সম্পর্কের উষ্ণতা এবং ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটায়। আজও যশ জোহরকে একজন দূরদর্শী প্রযোজক এবং হিন্দি সিনেমার অন্যতম প্রবাদপুরুষ হিসেবে স্মরণ করা হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সিনেমা কেবল গল্প নয়, বরং একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন। এই কারণেই যখন তাঁর সিনেমাগুলি বক্স অফিসে ব্যর্থ হত, তখন তিনি কেবল আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়তেন। যশ জোহরের প্রযোজনা সংস্থা ধর্মা প্রোডাকশন ১৯৯০ সালে ‘অগ্নিপথ’ প্রযোজনা করে। এই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন মুকুল এস. আনন্দ। ছবির গল্প বিজয় দীননাথ চৌহান নামে এক যুবককে নিয়ে যে তার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে মুম্বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করে। অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী, নীলম কোঠারি, ড্যানি ডেনজংপার মতো শক্তিশালী তারকারাও ছবিটিকে হিট করাতে পারেননি।
advertisement
১৯৯০ সালে যখন যশ জোহরের 'অগ্নিপথ' ছবি মুক্তি পায় এবং বক্স অফিসে তেমন সাফল্য পায়নি, তখন তিনি ভেঙে পড়েন। এই ভেঙে পড়ার গল্পটি তাঁর ছেলে করণ জোহর নিজের আত্মজীবনী 'অ্যান আনসুটেবল বয়'-তে ভাগ করে নিয়েছেন। এতে করণ জোহর বলেছিলেন, 'অগ্নিপথ' যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন যশ জোহর এবং পুরো দল নিশ্চিত ছিল যে এটি একটি ঐতিহাসিক ছবি হবে।
advertisement
দুর্দান্ত অভিনেতা, শক্তিশালী গল্প এবং দুর্দান্ত পরিচালনার কারণে তাঁরা অনুভব করেছিলেন যে তাঁরা একটি মাস্টারপিস তৈরি করেছেন। ছবিটির প্রিমিয়ারের পর সবাই এটির প্রশংসা করেছিল, কিন্তু যখন এটি মুক্তি পায় তখন এটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
এই ব্যর্থতা যশ জোহরের হৃদয় ভেঙে দেয়। কঠোর পরিশ্রম এবং দূরদর্শিতা সত্ত্বেও কেন এই ছবিটি সফল হয়নি তা তিনি বুঝতে পারেননি।
এই ব্যর্থতা যশ জোহরের হৃদয় ভেঙে দেয়। কঠোর পরিশ্রম এবং দূরদর্শিতা সত্ত্বেও কেন এই ছবিটি সফল হয়নি তা তিনি বুঝতে পারেননি।
advertisement
'ডুপ্লিকেট' এবং পরে 'অগ্নিপথ'-এর ব্যর্থতা তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে একজন 'ব্যর্থ প্রযোজকের' ভাবমূর্তি এনে দেয়। তিনি সারা জীবন এই যন্ত্রণা অনুভব করেছিলেন। তাঁর ছেলে করণ জোহরও এই যন্ত্রণা অনুভব করেছিলেন। ২২ বছর পর ২০১২ সালে, বাবার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ এবং সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য করণ জোহর অগ্নিপথের রিমেক তৈরির সিদ্ধান্ত নেন, ছবি মুক্তি পায়। হৃতিক রোশন, সঞ্জয় দত্ত, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত 'অগ্নিপথ' সুপারহিট হয়। করণ জোহর তাঁর মা হিরু যশ জোহরের সঙ্গে মিলে 'অগ্নিপথ'-এর রিমেক প্রযোজনা করেন। এবার পরিচালক ছিলেন করণ মালহোত্রা।
advertisement
গল্পটি মূলত একই ছি - বিজয় দীননাথ চৌহানের প্রতিশোধ চরিতার্থ করার, কিন্তু এটিকে একটি আধুনিক ছোঁয়া দেওয়া হয়েছিল। ছবিটির বাজেট ছিল ৫৮ কোটি টাকা। মুক্তির পর এটি ব্লকবাস্টার হিসেবে প্রমাণিত হয়। ভারতে এর মোট আয় ছিল ১২০ কোটি টাকা, যেখানে বিশ্বব্যাপী আয় হয়েছিল ১৯৩ কোটি টাকা। এটি 'সুপারহিট'-এর মর্যাদা পায় এবং ২০১২ সালের পঞ্চম সর্বোচ্চ আয়ের হিন্দি ছবি হয়ে ওঠে। এই ছবির সাফল্যের মাধ্যমে করণ জোহর অনুভব করেন যে তিনি তাঁর বাবার হৃত সম্মান ফিরিয়ে এনেছেন। করণ তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার কাছে এই ছবিটি তৈরি করা ছিল বাবার প্রতি ন্যায়বিচার। আমি ১৯৯০ সালে ব্যর্থ হওয়া ছবিটিকে সফল করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলাম।’’