ছাপরা, বিহার: বাস্তব গল্পের চেয়েও মধুর, বিশেষ করে তার ভিত যদি তৈরি হয় কঠোর সংগ্রামে। তাই আরব্য রজনীর শ্রমজীবী এক রাতের বাদশা হলেও বাস্তবে এক রাতের মধ্যে কোটিপতি হয়ে উঠলেন বেঙ্গালুরুর এক শ্রমিক।
জানা গিয়েছে যে আনন্দ কুশওয়াহা বিহারের ছাপড়ার একমা ব্লকের পারসার বাসিন্দা। বাড়ির আর্থিক অবস্থা দেখে আনন্দ বেঙ্গালুরুতে চলে যান। যেখানে তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। মা ধনসারা দেবী এখনও অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। অন্য দিকে, বাবা রাজা রাম কুশওয়াহা সবজি বিক্রি করে অতি কষ্টে পরিবার চালান। পরিস্থিতি নিতান্তই দারিদ্র্যপীড়িত। বাড়িতে তিনটি ঘর আছে, যেখানে পরিবারের সদস্যরা কোনওভাবে টিকে থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। বাড়ির ছাদ নেই। সিলিংয়ে ময়লা জমে আছে, ঘরগুলোও খুব ছোট, যার ফলে সেখানে থাকা খুব কঠিন।
advertisement
ধনসারা দেবী লোকাল 18-কে বলেন, ‘‘আমরা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করছি। আমার ছেলে আনন্দ বেঙ্গালুরুতে থাকে এবং শ্রমিকের কাজ করে। ও গত দুই বছর ধরে ড্রিম১১ খেলছে। কিন্তু আমাদের তা জানা ছিল না।’’ অন্য দিকে, আনন্দ কুশওয়াহা নিজে বলছেন, ‘‘যখন আমি এক কোটি টাকা জিতেছিলাম, তখন আমি প্রথমেই আমার বাবাকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতে পারেন।’’
তেমনই বাবা রাজা রাম কুশওয়াহা বললেন, “আমি জনতা বাজার থেকে সবজি কিনি। আর আমি একমা বাজারে সবজি বিক্রেতা হিসেবে কাজ করি। যার সাহায্যে আমি সংসার চালাই”। তিনি জানান যে আনন্দ গত দুই বছর ধরে ড্রিম ইলেভেন খেলছিলেন। এই খেলার মাশুল অবশ্য দিতে হয়েছে, ২২ হাজার ইতিমধ্যেই হারিয়েছেন তিনি খেলায়। ‘‘এই কথা পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়নি। কিন্তু যখন সে এক কোটি টাকা জিতেছিল, তখন সে প্রথমেই রাত ১১টায় আমাকে ফোন করে বলেছিল যে বাবা, আমি এক কোটি টাকা জিতেছি। আমি বিশ্বাস করিনি, আমি তাকে সকালে ফোন করে কথা বলতে বলেছিলাম, কিন্তু তার পর সে সকালে আবার ফোন করে একই কথা বলল। তখন আমি তার কথা বিশ্বাস করলাম!’’
এর পর দেখতে দেখতে খবর ছড়িয়ে পড়ে, বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করেন প্রতিবেশীরা। “সকাল থেকেই বাড়িতে ভিড় ছিল। সবাই মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য বলতে শুরু করল এবং এও বলল যে এটা এক ধরনের জুয়া। এটা খেলা উচিত নয়, এর অসুবিধাও আছে”, বলেন রাজা রাম কুশওয়াহা। সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আনন্দ যে টাকা জিতেছে, তা দিয়ে প্রথমে একটি বাড়ি তৈরি করা হবে এবং কর্মসংস্থানের জন্য নীচে একটি দোকান খোলা হবে। সেখানে আনন্দ কাজ করবে এবং আমিও এখানে ব্যবসা করার সুযোগ পাব। যার ফলে ঘর থেকে দারিদ্র্য দূর হবে। বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেরাও আছে। জেতা টাকার সবই পড়াশোনায় ব্যয় হবে।’’