ইউরোপিয়ান একাডেমি অফ নিউরোলজি (EAN) কংগ্রেস ২০২৫-এ উপস্থাপিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য: ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখলে মানুষের জৈবিক বার্ধক্য দ্রুত হয় এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়!
advertisement
গবেষকরাই প্রথমবার এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। তাদের বিশ্বাস, ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ আর আতঙ্কের পুনরাবৃত্তি ব্যক্তির শরীরের বয়স দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। যারা এমনটা অনুভব করেন, তাদের ক্ষেত্রে ৭০ বছর বয়সের আগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় তিনগুণ বেশি। এমনকি, দ্রুত জৈবিক বার্ধক্যের কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং এই গবেষণার লেখক আবিডেমি ওতাইকু ব্যাখ্যা করেছেন, “আমাদের ঘুমন্ত মস্তিষ্ক স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। সে কারণেই দুঃস্বপ্ন দেখে আমরা প্রায়শই ঘর্মাক্ত অবস্থায়, শ্বাসকষ্ট নিয়ে আর হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে জেগে উঠি – কারণ আমাদের ‘লড়ুন বা পালান’ (fight-or-flight) প্রতিক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চাপের প্রতিক্রিয়া দিনের বেলায় আমাদের অভিজ্ঞতার চেয়েও তীব্র হতে পারে।”
আরও পড়ুন: বলুন তো, ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী চিনে আম গাছ পাঠিয়েছিলেন? ৯৯% মানুষই জানেন না সঠিক উত্তরটি…
তিনি আরও বলেন, “দুঃস্বপ্ন কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা দীর্ঘক্ষণ ধরে বাড়িয়ে রাখে, যা কোষের দ্রুত বার্ধক্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যারা নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ক্রমবর্ধমান চাপ বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।” এর পাশাপাশি, দুঃস্বপ্ন ঘুমের গুণগত মান ও সময়কাল উভয়কেই ব্যাহত করে। এতে শরীরের রাতের বেলার অত্যাবশ্যক কোষীয় পুনরুদ্ধার এবং মেরামতের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ এবং ব্যাহত ঘুমের সম্মিলিত প্রভাবই সম্ভবত আমাদের কোষ ও শরীরের দ্রুত বার্ধক্যের কারণ।
গবেষকরা প্রায় ১৯ বছর ধরে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বাবা-মা এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত দুঃস্বপ্নের ফ্রিকোয়েন্সি ট্র্যাক করেছেন। তারা দেখেছেন যে এই ব্যক্তিদের জৈবিক বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে লিঙ্গ, বয়স, মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা বা জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন এবং দ্রুত বার্ধক্যের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।
ব্যক্তিদের জৈবিক বয়স পরিমাপ করার জন্য, গবেষকরা ক্রোমোজোমের সুরক্ষামূলক শেষ অংশ, অর্থাৎ টেলোমিয়ার পরীক্ষা করেছেন। টেলোমিয়ার যত ছোট হয়, জৈবিক বয়স তত বেশি হয়। এই গবেষণাটি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রতি সপ্তাহে দুঃস্বপ্ন দেখা গভীর উদ্বেগের প্রতিফলন হতে পারে, এমনকি মাসে একবার দুঃস্বপ্ন দেখাও একটি বিপদ সংকেত হতে পারে।