আসলে প্রায় প্রতিটি ভারতীয় ছেলেমেয়েই বোধহয় মনের ভিতর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কিংবা ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার স্বপ্ন লালন করে থাকে। কারণ এই ধরনের চাকরি পাওয়া সকলের কাছেই অত্যন্ত গৌরবের। কিন্তু এই পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্ব কিন্তু অতটাও সহজ নয়। শহরে এই সংক্রান্ত নানা কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠলেও প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েরা কিন্তু সেই সুযোগ-সুবিধাটুকু থেকে বঞ্চিত হয়। আলিপুরদুয়ার তেমনই একটি জায়গা। সেখানে পোস্টিংয়ের পর আইপিএস অফিসার ওয়াই রঘুবংশী দেখেন, আলিপুরদুয়ারের বেশির ভাগ মানুষই আদিবাসী সম্প্রদায়ের এবং তাঁরা চা বাগানে কাজ করেই জীবন-জীবিকা চালান। সেই সব পরিবারের মেধাবী ছেলেমেয়েরা দারিদ্রের কারণে পিছিয়ে পড়তে থাকে। আর সেটা যাতে না-হয়, তার জন্যই দারুণ এই উদ্যোগ নিয়েছেন রঘুবংশী।
advertisement
তা-ই যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ। এই উদ্যোগকে সাফল্যমণ্ডিত করতে এই আইপিএস অফিসার পাশে পেয়েছেন নিজের বন্ধুদের। এমনকী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ বিভাগ এবং স্থানীয় এনজিও-ও। আলিপুরদুয়ারের স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিষ্ঠান আলিপুরদুয়ার মানবিক মুখ (Alipurduar Manobik Mukh)-এর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তার পর আলিপুরদুয়ারের প্রায় প্রতিটি স্কুলে একটা পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে ৫০ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে বাছাই করে নেওয়া হয়। এর পরেই অনলাইন কোচিং শুরু হয়।
আরও পড়ুন : পুজোর আগেই পর্যটন শিল্পে বড় খবর! তৈরি হচ্ছে শতাধিক হোমস্টে! কোথায় জানুন
News18-কে এক সাক্ষাৎকারে ওয়াই রঘুবংশী জানিয়েছেন যে, ওই কোচিং সেন্টারে সপ্তাহে তিন দিন করে দেড় ঘণ্টার পদার্থবিদ্যা ক্লাস হয়। সেই সঙ্গে সাপ্তাহিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়। আবার সপ্তাহে পাঁচ দিন ১ ঘণ্টা করে রাখা হয়েছে রসায়নের জন্য। এছাড়া সপ্তাহে তিন দিন ১ ঘণ্টা করে নেওয়া হয় অঙ্কের ক্লাসও। সেখানে পড়ান আইআইটি-র শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এছাড়াও যাঁরা নামীদামি কোচিং সেন্টারে পড়ান, তাঁদেরকেও এই কোচিং সেন্টারে পড়ানোর জন্য রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রথমে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ৫০ জন পড়ুয়াকে বাছাই করেছিলাম। যার মধ্যে কয়েক জন ইতিমধ্যেই ছেড়ে দিয়েছে। আসলে আমি মনে করি, সামাজিক ভাবে আমরা তখনই এগিয়ে যাব, যখন সকলেই সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেধাবী ও প্রতিভাবান পড়ুয়ারা তো জানেই না, এই সব পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। তাই আমার আইআইটি-র বন্ধুরা এই সব পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাসের সুযোগ করে দিয়েছেন।”
আরও পড়ুন : এখনও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করছেন? সচেতন করতে যা করল মালদহ পুরসভা
বর্তমানে একাদশ শ্রেণির জন্যও ওই কোচিং সেন্টারটি ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বাছাই করেছে। যার পাঠ্যক্রমের মেয়াদ হবে ২ বছর। তবে এই উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়েছে ওয়াই রঘুবংশীকে। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন যে, এলাকার অধিকাংশ পড়ুয়ার কাছে মোবাইল ফোনের সুবিধাটুকুও নেই। এখানেও মুশকিল আসান করেছেন ওই পুলিশ অফিসার। তিনি পড়ুয়াদের জন্য মোবাইলের ব্যবস্থা করেছেন। আর যারা নেটওয়ার্কের সমস্যায় ক্লাস করতে পারছিল না, তারা এখন থানায় এসে ক্লাস করছে। এখানেই শেষ নয়, আর একটা বড় সমস্যা ছিল। আর সেটা হল - পড়ুয়াদের অভিভাবকদের আইআইটি অথবা ইউপিএসসি নিয়ে সেরকম কোনও ধারণাই নেই। সে-ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের এই প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করেছেন আলিপুরদুয়ার মানবিক মুখ।
যাতে সকল পড়ুয়া সবথেকে ভালো সুবিধাটুকু পেতে পারে, তার জন্য রীতিমতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন আইপিএস অফিসার ওয়াই রঘুবংশী!