ট্রলি ব্যাগ এসেছে, লিফট-এক্সেলেটরের সুবিধা হয়েছে। ফলে মাল টানার ঝক্কি থেকে মুক্তি পেয়েছেন যাত্রীরা। কিন্তু এই আরামেরই মাশুল গুনছেন কুলিরা। আগে যেখানে একসঙ্গে দশ-বারোটা ট্রেন ছাড়লেই কাজ মিলত, এখন সারাদিনে কয়েকটা ডাকে কাজ সারা যায় না।
আরও পড়ুন: বাংলা সিকিমের প্রাণভ্রোমরা ফের ক্ষতিগ্রস্ত,ভেঙে গেল ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের এই অংশ,রইল ফটো
advertisement
স্থানীয় কুলি দীনেশ কুমার মুখিয়া জানান, “আমাদের পরিবার বহু প্রজন্ম ধরে এই কাজ করছে। অন্য কোনো পেশা নিয়ে ভাবিনি কখনও। কিন্তু এখন ডাক পড়ে না বললেই চলে। মৌখিকভাবে আমরা রেলের কর্মচারী হলেও কোনো সরকারি সুবিধা পাই না। সরকারের কাছে আবেদন, স্টেশনের উন্নয়ন শেষে আমাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।” কুলিদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যবীমা, পেনশন বা সামাজিক নিরাপত্তা, কিছুই নেই। অথচ সারাজীবন স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তারা।
আরও পড়ুন: কারখানায় তালা ঝুলিয়ে পগারপার মালিক, পুজোর মুখে মাথায় হাত ১,৪০০ শ্রমিকের
যাত্রী সুরজিৎ দে বলেন, “উন্নতি হওয়া দরকার, যাত্রীদের সুবিধার জন্য নতুন ব্যবস্থা আসবেই। তবে তাই বলে কুলিদের হারিয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। বয়স্ক মানুষ, একা যাত্রী কিংবা ভারী মালপত্র নিয়ে যারা আসেন, তাদের ভরসা আজও কুলিরাই। সরকারের উচিত বিকল্প কোনো উদ্যোগ নেওয়া।”
সময়ের স্রোতে অনেক কিছুই বদলায়। পুরনো অভ্যাস ভুলে নতুন পথ খুঁজে নেয় মানুষ। কিন্তু সেই পথচলায় হারিয়ে যায় বহু পেশা, বহু জীবনসংগ্রাম। স্টেশনের কুলি, যারা একসময় যাত্রার অপরিহার্য অঙ্গ ছিলেন তাদের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত। উন্নয়ন প্রয়োজনীয়, কিন্তু সেই উন্নয়নের ফাঁদে যদি মানুষের জীবিকা শেষ হয়ে যায়, তবে তা হবে সমাজের কাছে এক গভীর হারানো। হয়তো একদিন এনজেপি স্টেশনে দাঁড়িয়ে আমরা বলব, “এই চত্বরে একদিন লাল জামা পরা মানুষরা হাঁটতেন, কাঁধে তুলে নিতেন আমাদের ভরসা।”





