১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত নৃপেন্দ্র নারায়ণ হিন্দু হল দার্জিলিংয়ের বাঙালি সমাজের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার অনেক আগে, এখানেই ভাষণ দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, সিস্টার নিবেদিতা এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। সে কারণে এই মঞ্চ কেবল পুজোর আয়োজনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভারতীয় ইতিহাসের স্মৃতিবাহী। একসময় শিলিগুড়ি থেকে টয় ট্রেনে চেপে মায়ের প্রতিমা আসত এই হলে, সেই রোমাঞ্চকর কাহিনি এখনও ছড়িয়ে পড়ে দার্জিলিংয়ের মানুষের মুখে মুখে।
advertisement
আরও পড়ুনঃ শুরু হয়েছে নবরাত্রি! ‘এই’ কদিন করুন বিশেষ পাঠ ও পুজো
পুজো কমিটির সেক্রেটারি ড. প্রতাপ আদিত্য গুহ জানালেন, “সাবেকিয়ানায় ধুমধাম করে বহু বছর ধরে এই পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সন্ধ্যা আরতি থেকে ভোগ প্রসাদ বিতরণ, কোনও কিছুতেই খামতি থাকে না। জাতি–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ একত্রিত হন এই পুজোয়।” আজও সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর ভোগ রান্না করেন বিশেষভাবে আমন্ত্রিত ব্রাহ্মণরা। কুইন্টালের পর কুইন্টাল ভোগ প্রস্তুত হয়, যা ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। অষ্টমীর দিন আয়োজন করা হয় কুমারী পুজোর, যা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান মানুষ। সপ্তমীর দিন পাহাড়ি সংস্কৃতির বিশেষ আচার ফুলপাতি পালিত হয় নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে।
এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ দুর্গাদশমীর শোভাযাত্রা। মা দুর্গার প্রতিমাকে কাঁধে নিয়ে পুরো দার্জিলিং শহর প্রদক্ষিণ করানো হয়, এক অনন্য ঐতিহ্য, যা আজও টিকে আছে।
দীর্ঘ এক দশক পর এবার আবারও সেই পুরনো রীতি ফিরছে। এই বিষয়ে পুজো কমিটির সেক্রেটারি ড. প্রতাপ আদিত্য গুহ জানান, প্রতিমাকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হবে দার্জিলিং রেলওয়ে স্টেশনে, যেখানে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের সহযোগিতায় প্রতিমা তোলা হবে ট্রয় ট্রেনে। এরপর প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হবে বাংলাখোলা পর্যন্ত এবং সেখানেই সম্পন্ন হবে বিসর্জন।
শুধু নিয়মকানুনেই নয়, এবছর রয়েছে আরও কিছু বিশেষ আকর্ষণ। নবমীর দিন শিলিগুড়ির খড়িবাড়ি থেকে আসছে ধামসা-মাদল দল, যাদের পরিবেশনা মাতিয়ে তুলবে দর্শকদের। পাশাপাশি ভোগ প্রসাদ বিতরণের আয়োজন আরও বড় পরিসরে করা হয়েছে। পর্যটকদের কাছেও এই পুজো এখন অন্যতম আকর্ষণ। দুর্গোৎসবের সময় দার্জিলিং এলে নৃপেন্দ্র নারায়ণ হিন্দু হলের পুজো না দেখলেই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় সফর। ঐতিহ্য, ইতিহাস আর আবেগে ভরপুর এই পুজো প্রমাণ করে দেয়, সময় বদলালেও সংস্কৃতির মূল সুরকে আঁকড়ে রেখেই এগিয়ে চলে দার্জিলিং।