আজও পুরনো রীতি মেনেই লক্ষ্মী পুজোর পরের দিন তান্ত্রিক মতে হয় দুর্গা মায়ের আরাধনা। তার পাশে মেলাও বসে। মালডাঙ্গীর মেলা বলেই খ্যাত এই পীঠস্থানটি। ‘মালডাঙ্গী’ কথাটি আসলে রাজবংশী শব্দ। সেই সময় কাঠের গুড়িকে বোঝাতে ‘মাল’ বলা হত। জঙ্গলের ঐ কাঠের গুড়ি বা মালগুলোকে উঁচু বা ‘ডাঙ্গা’ জায়গায় এনে রাখা হত। সেই ‘মালডাঙ্গী’ শব্দের উৎপত্তি।
advertisement
আরও পড়ুন – Cyclone Alert: সাইক্লোনের নতুন আতঙ্ক, টার্গেট কি ওড়িশা উপকূল, বঙ্গোপসাগরে ফের কোন অশনির আশঙ্কা
কেন পুজো শুরু হয়?
সে সময় জঙ্গলের বিভিন্ন ক্ষিপ্ত পশু বা জানোয়ারদের আক্রমনের থেকে রক্ষা পেতে রসকান্ত,কান্তিলালেরা সেই সময় মায়ের আরধানা শুরু করেন। কথিত আছে যে, কান্তিলাল মালি নিজের হাতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বানীয়েছেন। নিজের হাতে প্রতিমা বানিয়ে দেবী দুর্গার কাছে সন্তানলাভের কামনা ও প্রার্থনা করেন তিনি। ঘটনাচক্রে পরের বছরেই তার পুত্র সন্তান লাভ হয়।আর সেই থেকেই সেখানকার স্থানীয় রাজবংশী সমাজের মানুষের মনে দেবী দুর্গা বা মালডাঙ্গী দেবীর ‘জাগ্রত’ এর রূপকথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে যা আজও বিদ্যমান। তারপর থেকে রসকান্ত রায় ও কান্তিলাল মালির বংশধরেরা বংশপরম্পরায় স্থানীয় রাজবংশী মানুষদের সঙ্গে নিয়ে এই পুজো করে আসছেন।
পুজোর বিশেষত্ব :
এই পুজোর বিশেষত্ব হচ্ছে লক্ষ্মী পুজোর পরের দিন বিশেষ তান্ত্রিক মতে দেবী দুর্গার বা মালডাঙ্গী দেবীর পুজো দেওয়া হয়।যেখানে শত শত ভক্তবৃন্দরা নিজের মনকামনা পূরন হবার পর আজও দেবীর উদ্দেশ্য পাঠা বা কবুতর বলি দেন। এতই জাগ্রত এখানকার দেবী ‘মালডাঙ্গী’। আজ দেবী মালডাঙ্গী’র বিশেষ পুজো হবার পর এখানে একদিনের জন্য বসেছে মেলা।যেখানে হরেকরকম দোকানপাঠ নিয়ে দোকানদারেরা আসেন।আগে এই মেলা হত হ্যাজাক জ্বলিয়ে।সেই সময় ছিলনা আধুনিক রকমারি লাইটের বাহাদুরি। তখন আমবাড়ি,মাটিগাড়া,রাজগঞ্জ থেকে গরু বা মোষের গাড়িতে করে লোকেরা আসতেন এই পুজো দেখতে। পাশাপাশি এলাকার মেয়ে জামাইয়েরাও বছরের এই সময়ে দেবী মালডাঙ্গীর টানে আসেন নিজ নিজ শ্বশুর বাড়ি।
বর্তমান সময়ে রসকান্ত রায়ের নাতি গনেশ রায় এলাকার লোকজনদের নিয়ে এই পুজোর দায়িত্বে আছেন। গণেশ রায় জানালেন, ” দুর্গাপুজোর বিজয়া দশমীর পরে ৭ দিন আমরা মাকে এখানেই রাখি। তারপর প্রথম দিন কোজাগরী রূপে লক্ষ্মী মায়ের পুজো হয় এবং পরের দিন তান্ত্রিক মতে পুজো হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত পুজো হয় । এই মেলায় দূরদূরান্ত থেকে অনেকে আসেন। শহরের মধ্যে রাজবংশী ঐতিহ্যকে ধরে রেখে শতবর্ষ দূরে আজও পুজিত হচ্ছেন মা।”
Anirban Roy