দোতলা কাঠের বাংলোটির প্রতি কোণেই লেগে আছে ভালবাসা।সুকনা টয় ট্রেন স্টেশন থেকে কয়েক পা এগোলেই চোখে পড়বে সুকনা বনবাংলো লেখা একটা বোর্ড। ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বুক চিরে চলে গিয়েছে কালো পিচ ঢাকা রাস্তা। রাস্তার পাশ কাটিয়ে ছুটেছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের লাইন। আর তার পাশেই মহানন্দা স্যাংচুয়ারির মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুকনা ফরেস্ট বাংলো।
advertisement
লোহার গেট ঠেলে একবার ঢুকে পড়লেই হল। বাহারি ফুল, ঘন সবুজ জঙ্গল, পাহাড়ি ঝোড়া আর কাঠের দোতলা বাড়ি। এই বাংলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। অনেকে বলেন ব্রিটিশরা এই বাংলো বানিয়েছিলেন চা বাগানের কাজ দেখাশোনা করার জন্যে। স্বাধীনতার পরে অবশ্য এই বাংলোর ব্যবহার হয়ে আসছে পুরোপুরি ভাবে বন দফতরের আধিকারিকদের জন্য। এখানে এসে থাকার সুযোগ অবশ্য বাকিদেরও মিলতে পারে, তবে তার জন্য বিশেষ অনুমতি নিতে হবে বন দফতরের।
আরও পড়ুন : শীতের উৎসবের সাজে সেজে উঠছে কলকাতা, আজ বড়দিন পালন অনুষ্ঠানের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী
বাংলোয় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে একটা ফোটো ফ্রেম। যেখানে একাধিক বিখ্যাত ব্যক্তি যাঁরা এখানে এসেছিলেন, তাঁদের স্বাক্ষর করা আছে। ১৯৫৪ সালের ৫ নভেম্বর এখানে এসেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। সুকনা বন বাংলোয় তাঁর উপস্থিতি স্বাক্ষর করে রাখা আছে। এছাড়া এখানে এসেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বিধানচন্দ্র রায়৷ তাঁরও স্বাক্ষর রাখা আছে ফটো ফ্রেমে বাঁধিয়ে।
২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে একাধিকবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে এই সুকনা বন বাংলোয় থেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আঁকা ছবি রাখা আছে বনবাংলোর বারান্দায়৷ এ ছাড়া সুকনা বনবাংলো নিয়ে লেখা তাঁর একটি কবিতা রাখা আছে এই বাংলোয়। দীর্ঘ দিনের এই বাংলোয় আসা যাওয়া করেছেন বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। আর তাই এই বন বাংলো ঘিরে মানুষের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো।
আরও পড়ুন : দুয়ারে রেশন প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে প্লাস্টিক চাল! রেশন দেওয়া বন্ধ করলেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা
তবে এই বাংলো সন্নিহিত জঙ্গল ফের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য বন দফতর। মহানন্দা স্যাংচুয়ারি পার্ক ফের সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন টিকিট কাউন্টারের স্থান বা গেট আগের মতো নেই৷ বয়সের ছাপ যেমন পড়েছে তেমনই বহুদিন রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার কারণে শ্যাওলা জমেছে। বৃষ্টির কারণে পঞ্চ নদী খোলার ওপরে থাকা সেতুতে ফাটল ধরেছে। ফলে এখন আর জঙ্গলে বাস সাফারি করানো হচ্ছে না। বন দফতর চেষ্টা করছে সেতু সারিয়ে ফের বাস সাফারি শুরু করে দেওয়ার জন্য। যার ফলে পর্যটকদের আসা যাওয়া আরও বাড়বে।সুকনা বন বাংলোর সঙ্গেই আছে একটা মিউজিয়াম। যেখানে নানা জীবজন্তুকে দেখার ও চেনার সুযোগ মিলবে।