দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ২৪ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলে ভারতের জয়কে নিশ্চিত করেন রিচা। আর সেই সঙ্গে টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১২টি ছক্কা মেরে হয়ে গেলেন প্রতিযোগিতার “সিক্স-কুইন”! গোটা দেশ যখন উচ্ছ্বাসে মত্ত, শিলিগুড়ির অলিগলিতে তখন উৎসবের আবহ। হিলকার্ট রোড থেকে শুরু করে বাঘাযতীন পার্ক—প্রতিটি পাড়ায় বাজি, ঢাক, গানের তালে কেঁপে উঠল শহর। রিচার বাড়ির সামনে জনসমুদ্র। প্রত্যেকের মুখে একটাই স্লোগান—“রিচা, তুমি আমাদের গর্ব!”
advertisement
রিচার এক সময়কার কোচ তপন ভাওয়াল আবেগভরে বললেন, “আজ আমার নিজের ছাত্রীর জন্য বুক ভরে গর্ব হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই ওর চোখে আমি একটাই জেদ দেখেছি—দেশের হয়ে খেলব। আজ ওর সেই স্বপ্ন সত্যি।” বছর ছয়েক আগেই বাংলা দলের কোচ শিবশঙ্কর পাল বলেছিলেন, “শিলিগুড়ি থেকে একটা মেয়ে এসেছে—যে দাঁড়িয়ে ছয় মারে। মেয়েদের ক্রিকেটে এমন দৃশ্য বিরল।” সেই ভবিষ্যদ্বাণীই যেন আজ সত্যি হল। রিচা ঘোষ নিজে বলেন, “এই জয় আমাদের কাছে সবকিছু। আমরা বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। এটা শুধু ট্রফি নয়, আমাদের পরিশ্রমের প্রতিদান। চাপ ছিল, কিন্তু নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল। দলের সবাই বলেছিল—‘তুই পারবি’। সেই বিশ্বাসই আমার শক্তি দিয়েছে।”
মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রবল ভক্ত রিচা শুরুতে পেস বোলিং করলেও পরে উইকেটকিপিংয়ে মন দেন, ধোনির প্রভাবেই। আজ তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন ‘লেডি ধোনি’ হিসেবে। রিচার ব্যাটে যখন চার-ছয় উড়ছিল, তখনই শিলিগুড়ির প্রতিটি ঘরে ঘরে টিভির সামনে উত্তেজনা তুঙ্গে। ম্যাচ শেষ হতেই শহরে শুরু হয় আনন্দ মিছিল। স্থানীয় স্কুল, কলেজ, মহিলা সংগঠন, ক্লাব—সবাই রিচার জয়ের উৎসবে সামিল। শিলিগুড়ির বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চে রাতভর চলেছে গান, নাচ, আবেগের বিস্ফোরণ।
শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের ক্রিকেট সচিব ভাস্কর মজুমদার জানান, “রিচাকে ছোটবেলা থেকে খেলতে দেখেছি। ওর মতো একনিষ্ঠ ও পরিশ্রমী মেয়ে আজকের দিনে বিরল। আজ ও গোটা দেশের গর্ব।”
শিলিগুড়ির মেয়ের হাত ধরেই বাংলার ক্রিকেট পেল প্রথম বিশ্বকাপ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পারেননি, ঝুলন গোস্বামী পারেননি—রিচা ঘোষ পারলেন। তাঁর হাতে আজ বাঙালির স্বপ্ন পূরণের ট্রফি। সব মিলিয়ে বলা যায়—এ শুধু ভারতের নয়, উত্তরবঙ্গেরও জয়। শিলিগুড়ির আকাশে আজ উড়ছে একটাই নাম— “রিচা ঘোষ, তুমি আমাদের গর্ব।”





